সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
গোলাপগঞ্জে প্রবাসী নারীর বাড়ি জোরপূর্বক ভোগ দখলের অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ৪:১৩:০০ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : গোলাপগঞ্জে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীর ক্রয়কৃত বাড়ির ন্যায্য অংশ বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো জাল দলিল সৃষ্টি করে জোরপূর্বক ভোগ দখল, আর্থিক ক্ষতি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তার আমমোক্তার মোগলাবাজার থানার চানপুর ধোপাকান্দি গ্রামের মৃত মোবারক আলীর ছেলে মো. আজির উদ্দিন। গত রোববার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজির উদ্দিন বলেন, আমার মামাতো বোন গোলাপগঞ্জের গাগুয়া গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুস সত্তারের মেয়ে আয়েশা বেগমও প্রবাসী। তিনি স্কুল জীবনে গোলাপগঞ্জের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন। সেই সুবাদে তার পরিচয় হয় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার রণকেলি গ্রামের অতির আলীর ছেলে শাহাজাহান আহমদের সাথে। পরবর্তীতে আয়েশা যুক্তরাজ্যে চলে গেলে শাহাজাহান ফোনে তার সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাকে বিয়ে করে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ, অনুনয় বিনয় করতে থাকেন। পরিবারের অমত সত্ত্বেও আয়েশা দেশে ফিরেন শাহাজাহানকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর আয়েশা বুঝতে পারেন শাহাজাহান প্রতারণা করেছেন। শাহাজাহানের অনেক মিথ্যা কথাবার্তা বা প্রতিশ্রুতি বুঝতে পারেন এবং জানতে পারেন। তিনি অন্য একটি মেয়েকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। সপ্তাহখানেক পর আয়েশা যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন তিনি মা হতে চলেছেন। এ সময় শাহাজাহান তাকে অনুনয় বিনয় করে আর কখনো বিশ্বাসভঙ্গ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে লন্ডন নেয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। অনাগত সন্তানের কথা ভেবে আয়েশা তাকে যুক্তরাজ্য নেয়ার ব্যবস্থা করেন।
আজির উদ্দিন বলেন, আয়েশা সেখানে চাকরি করতেন। পাশাপাশি তার জমানো টাকা ব্যবসায় বিনিয়োগও করেছিলেন। সেখান থেকে লভ্যাংশ পেতেন এবং সেদেশে অন্যান্য ভাতাদিও পেতেন। তার টাকায় শাহাজাহানের দেশে থাকা পরিবারও চালাতেন। ১৯৯৯ সালের ২৫ জুলাই শাহাজাহানের প্রতিবেশি আপ্তাব উদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে গোলাপগঞ্জের রণকেলী মৌজার জেএল নম্বর ২৮ এর ২০৮ খতিয়ানের ৫৮৮৫ এসএ দাগ নম্বরের ভূমি থেকে মোট ৬০ একর ভূমি আয়েশা ও শাহাজাহান দু’জনের নামে ক্রয় করেন। এই ভূমিতে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে ঘর তৈরি করা হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে দাম্পত্য সমস্যা দেখা দিলে এক পর্যায়ে ২০০২ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ইতিপূর্বে আয়েশা তিন সন্তানের মা হয়েছেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পর খরিদকৃত ভূমিতে তৈরি ঘরের দক্ষিণাংশসহ উঠান এবং আশপাশের কিছু অংশ আপসে আয়েশাকে দেয়া হয় এবং তিন সন্তান নিয়ে তিনি তা ভোগ করতে থাকেন। তার অবর্তমানে কেয়ারটেকার হিসাবে আমি তা দেখাশোনা করতাম। এভাবে কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাক চললেও কয়েকবছর পর আয়েশা তার ঘর ও ভূমির উন্নয়ন কাজ করতে চাইলে শাহাজাহান ও তার পরিবারের লোকজন নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
শাহাজাহানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করে আজির উদ্দিন বলেন, এক পর্যায়ে লিখিত বাটোয়ারানামা করার অনুরোধ করলে শাহাজাহান সময়ে ক্ষেপণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি দাবি করেন আয়েশা তার অংশ নাকি তাকে হস্তান্তর করেছেন। বিষয়টি আমি আয়েশাকে জানালে তিনি বিস্মিত হন। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রারি অফিসে অনুসন্ধানের পর ২০১৬ সালের আগস্টে শাহাজাহানের নামে একটি জাল দলিলের হদিস পান। ওই দলিলে আয়েশাকে দাতা ও শাহাজাহানকে গ্রহীতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর রনকেলী গ্রামের মাখন মিয়ার ছেলে শাহিন আহমদকে দলিলের সনাক্তকারী ও আসুক আহমদের ছেলে আহাদ আহমদকে সাক্ষী হিসাবে উল্লেখ করা হয়। দলিল লেখক হিসাবে নাম উল্লেখ করা হয় ঢাকাদক্ষিণ সাবরেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখক মো. আক্তারুজ্জামানের নাম। এদের কাউকে আয়েশা চিনেন না এবং আমি আক্তারুজ্জামানকে দলিলটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে আমাকে জানান।
তিনি বলেন, জাল দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে সম্পত্তি গ্রাস করার অপচেষ্টার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর আয়েশা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের যুগ্ম জেলা জজ তৃতীয় আদালতে শাহাজাহান, শাহীন, আহাদ ও আক্তারুজ্জামানকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটির কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে।