পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতায় ভর্তিতে বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ৪:১৭:৪৫ অপরাহ্ন
![পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতায় ভর্তিতে বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতায় ভর্তিতে বিড়ম্বনায় শিক্ষার্থীরা](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2021/01/sylheterdak-5-768x406.jpg)
লবীব আহমদ : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়েছেন স্নাতকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়ার কিছুদিন পরই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর শুরু হয় এই বিড়ম্বনা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিকে সর্বনিম্ন জিপিএ-৬.৫ ও বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৭ ধারীরা ভর্তি আবেদনের সুযোগ পাবেন। তবে, বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন কলেজে প্রথম পর্যায়ে জিপিএ-১০ প্রাপ্তরাও ভর্তির সুযোগ পান না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শেষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে শুরু হয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি। যারা ইতিমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে, তারা সবাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করে নেয়। পরে ঐ কলেজগুলোতে আসনগুলো ফাঁকা হয়ে যায়, যা আর ঐ বছরে পূরণ হয় না। পরবর্তী বছরগুলো ঐ ফাঁকা আসন নিয়েই কাটাতে হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঐ কলেজগুলো। অনেক কলেজের এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীরাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। যার কারণে তারা তাদের ভর্তি বাতিল করে সেখানে চলে যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজে ভর্তি হতে একবার লাগে টাকা, পরে ভর্তি বাতিল করতেও প্রয়োজন হয় অর্থের। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য আবারও লাগে টাকা। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় সারাদেশে ১০ লাখ ১১ হাজার ২৮২ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন৷ তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এদিকে, সারাদেশের সকল পাবলিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে স্নাতকে আসন আছে মাত্র ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৯৯টি। এক্ষেত্রে সাধারণভাবেই স্নাতক পড়তে পারছেন না-৫ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৮ জন শিক্ষার্থী। এখন, তাদের শেষ ভরসা ডিগ্রী অথবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধুমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে স্নাতকে ভর্তির স্বপ্ন হারান৷
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এ বছরের ১০ই মার্চ অনুষ্ঠিত হয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। এরপরই দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বেই ৫ই এপ্রিল শুরু হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আবেদন। পরে ২২মে থেকে ভর্তি শুরু হয়। ইতিমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় মেধা তালিকায় চান্স পেয়ে নির্দিষ্ট কলেজে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করাও শুরু করেছেন। ১ম ও ২য় মেধা তালিকায় ভর্তি শেষে এখন রিলিজ স্লিপের আবেদন চলছে। যেখানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন ভর্তি শুরু হয়েছে।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে ১৩ মে শেষ হয়। ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা ৫ই এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই শুরু হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৬ মে শুরু হয়ে ২৫ মে শেষ হয় চবির পরীক্ষা। ২৯মে শুরু হয়ে ৩১মে শেষ হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এক সাথে ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে পরীক্ষা নেওয়া গুচ্ছ পদ্ধতিতে জিএসটি ভর্তি পরীক্ষা ২০মে শুরু হয়ে শেষ হয় ৩জুন। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় ১০জুন। সবশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১৬ জুন শুরু হয়েছে। শেষ হয় ২৪শে জুন। এদিকে, গুচ্ছভুক্ত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা এখনো শুরুই হয়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সিলেটের এমসি কলেজের ১৫টি বিভাগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ২১৯৫ আসনের বিপরীতে ২১৫৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন৷ কিন্তু, বছর পেরিয়ে যেতে না যেতেই প্রথম বর্ষের বার্ষিক পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করে ১৪৬২ জন শিক্ষার্থী। এক বছরের মধ্যেই অন্যত্র চলে যাওয়া, বিদেশ গমন ও আরও নানা কারণে ৬৯১ জন শিক্ষার্থী কমে যান। এরকম অসংখ্য কলেজের শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন পড়ালেখা থেকে। শুধুমাত্র বিভিন্ন নিয়মকানুনের কাছে পরাজিত হতে হচ্ছে তাদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তারেক আহমদ বলেন, আমি স্নাতকে পড়া যাতে মিস না হয়, সেজন্য ন্যাশনালে ভর্তি হয়েছিলাম সিলেটের এমসি কলেজের রসায়ন বিভাগে৷ আমি পাবলিকে চান্স পাওয়া আমাকে ন্যাশনালে ভর্তি বাতিল করতে হয়। আমি চলে যাওয়ার পরে আমার সিটটা খালি থেকে যায়। এভাবে আমার মতো করে অনেকে চলে যাবে। যার ফলে প্রতিটা ডিপার্টমেন্টে অনেকগুলা সিট খালি থাকে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ- এর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে পড়া সুনামগঞ্জের জহিরুল হক বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে ভর্তি নেওয়ায় আমি এমসিতে বাংলা বিভাগে ভর্তি হই। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আমি শাবিতে পড়ার সুযোগ পেলে সেখানে চলে আসি। ন্যাশনালে আগে ভর্তি নেওয়ায় সেখানে ভর্তি হতে হয়েছে। কেননা, পাবলিকের পরীক্ষা ন্যাশনালের ভর্তির অনেক পরে হয়েছে। পাবলিকের আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির এ প্রক্রিয়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য একটা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা সহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত সমন্বয় করে ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি নেওয়া। নাহলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এতে করে মনোযোগ হারাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।