শেরপুরে কুশিয়ারা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২৩, ৪:২৩:৫১ অপরাহ্ন
![শেরপুরে কুশিয়ারা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ শেরপুরে কুশিয়ারা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2021/01/sylheterdak-5-768x406.jpg)
কাঞ্চন ভৌমিক, শেরপুর (মৌলভীবাজার) থেকে : ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইচে কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায়’ বাউল আব্দুল করিমের গানের সুরে গতকাল বুধবার বিকেলে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর অংশে এমনই ঝিলমিল করছিল একাধিক বাইসের নৌকায়। নৌকায় মাঝিদের কন্ঠে ভেসে উঠেছিল গ্রামবাংলার চিরন্তন আঞ্চলিক সারি গান। ঢাক-ঢোল আর করতালের তালে তালে এবং বৈঠার ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দে আর সুরের মূর্চনায় হারিয়ে গিয়েছিল হাজার উৎসুক দর্শকও। সব মিলিয়ে গতকাল বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শেরপুর এলাকায় বিরাজ করছিল অন্যরকম দৃশ্য। গ্রামের মহিলা দর্শকদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ্যণীয়। এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাটি মৌলভীবাজার সদর থানার শেরপুর-হামরকোনা যুব সমাজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।
এ নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন থেকে সিলেটের ওসমানীনগর, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে চলছিল নানা কৌতুহল। স্থানীয়রা জানান, কুশিয়ারা নদীতে অতি পরিচিত সংস্কৃতি এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা নানা কারণে আজ বিলীন হতে চলেছে। বছর জুড়ে নানা সমস্যায় থাকা এলাকার মানুষদের বিনোদনের এ মৌসুমে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাই ছিল তাদের আনন্দের অন্যতম উৎস। আগে প্রতিবছরই নানা সংগঠনের ব্যানারে এখানে এমন একাধিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হলেও গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। তাই, নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজন ও মেয়ের জামাই’র বাড়ির লোকদের তাদের এলাকার এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করার জন্য নিমন্ত্রণ দেন। তাদের এমন নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে আত্মীয় স্বজনরা আগের দিন থেকেই স্থানীয়দের বাড়িতে অবস্থান করেন।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে এলাকা পরিণত হয় আতœীয়-স্বজনের মিলন মেলায়। গতকাল বুধবার নৌকা বাইচ দেখতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত লোকজন প্রায় শতাধিক ছোট-ছোট নৌকা নিয়ে নদীতে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। এসব নৌকার বেষ্টনী নদীর পারে অকস্থান গ্রহণকারী দর্শনার্থীদের আলাদা আনন্দ যোগায়। এসব নৌকায় স্কুল/কলেজে পড়–য়া ছাত্র/ছাত্রী, ছেলে, বৃদ্ধ, বধূ, কিশোর-কিশোরীসহ সকল বয়সের দর্শক বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। এছাড়াও অনেকের নৌকা না থাকায় নদীর পাড়ে ও গাছের ডালে বসে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন। এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগতিায় মোট ১৪টি নৌকা অংশ গ্রহণ করে।
প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় শেরপুরের কুশিয়ারা তরী নৌকা, দ্বিতীয় হয় সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার বল্লব পুর গ্রামের কানাই শাহ নামক নৌকা এবং ৩য় স্থান অধিকার করে গরীবের তরী নামক সিলেটের বালাগঞ্জের নৌকা।