আশুরার তাৎপর্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:১১:২০ অপরাহ্ন
লুৎফুর চৌধুরী
হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। বিশ্বের অসংখ্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও বেদনাদায়ক ইতিহাস এ মাসে সংঘটিত হয়েছে। আশুরা আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো দশম তারিখ। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের দশম তারিখকে আশুরা বলে। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যার ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ৬২ হিজরি সনে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীদৌহিত্র হজরত হোসেইন (রা.)-এর শাহাদত এই দিনকে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।
মহররমের ১০ তারিখে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেন লওহে মাহফুজ কলম সাগর মহাসাগর ও পৃথিবী। এই দিনে হজরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন, আবার জান্নাত প্রদান করেন। এই দিনে আল্লাহ পাক আদম (আঃ) কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন এবং তাঁর তওবাও কবুল করেন। হজরত নূহ (আঃ) এবং তাঁর উম্মতদেরকে ভয়াবহ প্লাবণ থেকে মুক্তি দেন। হজরত ইউনুস (আঃ) কে মাছের পেটের ভিতর থেকে অলৌকিকভাবে মুক্ত করেছিলেন। আইয়ুব (আঃ) কে রোগমুক্তি ও শিফা দান করেছিলেন। হজরত ইবরাহিম (আঃ) কে নমরুদের অগ্নিকু- থেকে হেফাজত করেছিলেন। হজরত মুসা (আঃ) এর সঙ্গীসাথী বনি ইসরাইলদেরকে ফেরাউনের জুলুম নির্যাতন থেকে রক্ষা করে নীলনদ পার করেছিলেন। হজরত ঈসা (আঃ) কে আসমানে উঠে নিয়েছিলেন এবং আবার হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত হিসেবে পুনরায় আগমন করাবেন এই দিনেই। এই দিনেই হজরত হোসাইন (রাঃ) হৃদয়বিদারকভাবে শাহাদাতবরণ করছিলেন ইরাকের কারবালা প্রান্তরে। পৃথিবীর সৃষ্টিসহ নবীরাসুলগণের আরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে এই দিনে।
মুহাম্মদ (সঃ) মদিনায় আগমনের পূর্বে মদিনায় বসবাসকারী বেশিরভাগ ইহুদি খ্রিষ্টান ধর্মের লোক ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইয়াহুদিরা এইদিনে রোজা পালন করছে। তখন তিনি বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও নির্দেশ দিলেন। (বুখারি)। আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এই দিনে রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইয়াহুদিদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে তিনি ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। যেহেতু এই দিন ইয়াহুদিরাও রোজা রাখে, সে কারণে তাদের ব্যতিক্রমস্বরূপ ৯ মুহররমও রোজা পালন করা উচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো। (মুসলিম)
আশুরার দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতক ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে। রাসুল (সা.) এর প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইনের হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে; তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে; হজরত হুসাইন (রা.) এর কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে; আশুরা উপলক্ষে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা উচিত। এসব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই।
তবে এদিন ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা হতে পারে। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারীদর জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে। ইসলামের বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা দোষণীয় নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : কবি