সারাদেশে সিলেট বোর্ডের পাসের হার সর্বনিম্ন
গণিতের কঠিন প্রশ্নপত্র ও মানবিকে বেশী শিক্ষার্থী ফেল করা দায়ী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০২৩, ৫:৫৪:৫০ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স
সিলেট শিক্ষাবোর্ডে সর্বনিম্ন পাসের জন্য গণিতের কঠিন প্রশ্নপত্রকে দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি মানবিকে বেশী শিক্ষার্থী ফেল করাও এর অন্যতম কারণ।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার সকল বোর্ডের মধ্যে সর্বনি¤œ। এ বোর্ডে ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আর বরিশাল বোর্ডে সর্বোচ্চ ৯০.১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
সিলেট বোর্ডের বিষয়ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বোর্ডে গণিত বিষয়ে অংশ নেয়া ৯৯ হাজার ২০১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ১১ হাজার ৮৩৮ জন। পাস করেছে ৮৭ হাজার ৩৬৩ জন। কেবল গণিতে পাসের হার ৮৮.০৭ ভাগ।
সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ চন্দ্র পালও স্বীকার করেছেন, গণিত বিষয়ে সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নপত্র পেয়েছে সিলেট বোর্ড। গণিতের এ অধ্যাপক বলেন, এবারের এসএসসিতে যে কঠিন প্রশ্ন হয়েছে-সে বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের উপ-কমিটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এ কারণে এ বোর্ডে পাসের হার নেমে গেছে বলে তার মন্তব্য।
তিনি জানান, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে মানবিক বিভাগেই পরীক্ষার্থী ছিল ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পাসের হারও তাদের সবচেয়ে কম। মানবিকে পাসের হার ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্কুলগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষায় জোর দেয়ার আহবান জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় সিলেট শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে এই ফলাফল ঘোষণা করেন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর বোর্ডে ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৮৩ হাজার ৩০৬ জন শিক্ষার্থী। ফেল করেছে ২৬ হাজার ২২৬ জন শিক্ষার্থী।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে
অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৪৫ হাজার ২৮৩ এবং ছাত্রী সংখ্যা ৬৪ হাজার ২৪৯ জন। পাসকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৩৩ হাজার ৯০৯ জন এবং ছাত্রী ৪৯ হাজার ৩৯৭ জন। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬.৮৮ ভাগ আর ছাত্রদের পাসের হার ৭৪.৮৮ ভাগ।
গতবারের চেয়ে পাসের হার কমেছে
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে পাসের হার ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে। গত বছর এসএসসিতে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ জন। এরমধ্যে ছেলে ২ হাজার ৪৭০ ও মেয়ে ২ হাজার ৯৮২ জন। গত বছরের চেয়ে এবার ২ হাজার ১১৩ টি জিপিএ-৫ কমেছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭ হাজর ৫৬৫ শিক্ষার্থী।
ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ এগিয়ে, পিছিয়ে মানবিক
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবারও সবচেয়ে ভালো ফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ওই বিভাগে ২৩ হাজার ১৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ২১ হাজার ২২৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের পাসের হার ৯১ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৪১৭ এবং মেয়ে ২ হাজার ৭৮৭ জন। এবার মানবিকে ৭৯ হাজার ২৯৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৫৬ হাজার ১৬২ জন কৃতকার্য হয়েছে। ফেল করেছে ২৩ হাজার ১৩১ জন শিক্ষার্থী। এই বিভাগে পাসের হার মাত্র ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ২৮ এবং মেয়ে ১৩১ জন। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ৭ হাজার ১০৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৫ হাজার ৯২১ জন। ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ওই বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৮৯ জনের মধ্যে ছেলে ২৫ এবং মেয়ে ৬৪ জন। এবার সিলেট বোর্ডে শতভাগ পাশের সাফল্য দেখিয়েছে ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর কেউ পাশ করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শূন্য।
বিষয়ভিত্তিক ফেল করা শিক্ষার্থীদের তালিকা
বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ২ হাজার ৭১১ জন, ইংরেজিতে ৮ হাজার ২২ জন, ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ে ৩৮৮ জন, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষায় ১ হাজার ৭১০ জন, হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষায় ৫৩৪ জন, উচ্চতর গণিতে ৩০৫ জন, বিজ্ঞানে ৩ হাজার ৭৪৪ জন, কৃষি শিক্ষায় ২ হাজার ৬৪৯ জন, পদার্থ বিজ্ঞানে ২৬৪ জন, রসায়নে ১ হাজার ৮০ জন, জীব বিজ্ঞানে ২৭৭ জন, পৌরনীতিতে ১ হাজার ৪৬২ জন, অর্থনীতি ১৭৬ জন, ব্যবসায় উদ্যোগ ১০২ জন, হিসাব বিজ্ঞানে ২৭৩ জন, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৫০ জন, গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ৫৩৮ জন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে ১৫২ জন, বাংলাদেশের ইতিহাস ৩ হাজার ৫৭৪ জন এছাড়া আইসিটিতে ১ হাজার ১১১ জন ফেল করেছে।
চার জেলার মধ্যে মৌলভীবাজারে পাসের হার কম
চার জেলায় ফলাফলে পাশের হারে এবারও এগিয়ে রয়েছে সিলেট। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চার জেলার মধ্যে সিলেটে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ১২৪ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ৩২ হাজার ৩৯৯ জন। পাশের হার ৭৮.৭৮ শতাংশ। হবিগঞ্জে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৩৫৫ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১৫ হাজার ১৩১ জন। পাশের হার ৭৪.৩৪ শতাংশ। মৌলভীবাজারে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৫৭৫ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১৮ হাজার ৫৩ জন। পাশের হার ৭৩.৪৬ শতাংশ। সুনামগঞ্জে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার ৪৭৮ জন। এর মধ্যে পাশ করেছে ১৭ হাজার ৭২৩ জন। পাশের হার ৭৫.৪৯শতাংশ।
বিভিন্ন গ্রেডে যারা পাস করেছে
এবারের এসএসসির ফলাফলে ‘এ’ পেয়েছে ১৭ হাজার ২৯৩ জন শিক্ষার্থী, ‘এ’ মাইনাস পেয়েছে ১৬ হাজার ৬১৭ জন শিক্ষার্থী, ‘বি’ গ্রেড পেয়েছে ১৯ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী, ‘সি’ গ্রেড পেয়েছে ২২ হাজার ৮৬০ এবং ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছে ১ হাজার ২৭৭ জন শিক্ষার্থী।