ফুটপাত কার জন্য?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৩, ১১:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন
বেলাল আহমদ চৌধুরী
পথ পথিকের জন্য। তাই বলে পথিক পথের মধ্যস্থল দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন না। কাজেই পথিককে চলতে হবে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ফুটপাত দিয়ে। তবুও বলতে হয় পথ তুমি কার? ভ্রাম্যমান হকারের দখলে মহানগরের ফুটপাত ও রাজপথ। যার ফলে সিলেট মহানগরে পথযাত্রীদের পথ চলা দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। অন্যান্য সমস্যার সাথে যানজট এখন প্রকটতর। এ যাত্রা রাস্তায় প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, লেঙ্গুনা, সিএনজি, রিকশা, ঠেলাগাড়ী, হাতাগাড়ী, বেআইনি সমারোহে যানজটের ভয়াবহতা সৃষ্টিতে প্রতিনিয়তই মদদ জোগাচ্ছে, প্রান্তসীমার মানুষগুলো রাস্তার ‘পর যত্রতত্রভাবে পসরা সাজিয়ে ফুটপাত দখল করে আসছে। সিলেটে একটি প্রবাদ আছে- ‘নাও টানা যায়, কিন্তু রথ টানা যায় না, কোন রকমে ফাঁক ফোকট দিয়ে জ্যামিতিক প্রসেস-এ হেঁটে চলা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে পড়েছে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকেরই জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তেমনি কারও দ্বারা ভোগান্তি সৃষ্টি করা কোন গণতান্ত্রিক অধিকারের আওতায় পড়ে না। উল্লেখ্য মানুষ জটের মধ্যে হকার জট এখন আমাদের ‘গোঁদের’ পর ফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে পড়ে শৈশবে বাৎসরিক পরীক্ষার পর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার একটি ইভেন্ট ছিল, উবংং ধং ুড়ঁ ষরশব. অর্থাৎ যেমন খুশি তেমন সাজো।’
সিলেট মহানগরের যত্রতত্র হকারজট ও যানজট দেখে মনে করিয়ে দেয়, ‘যেমন খুশি তেমন চলো, কোন কিছু নাহি বলো’। বিগত ২৫মে ২০১৭ সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সিলেটের মুখ্য মহানগর বিচারিক বিজ্ঞ হাকিম মহোদয় জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংলগ্ন ফুটপাত অবৈধ দখলদার, নেপথ্যে থাকা দখলদার ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা তদন্ত করে আদালতে দাখিল করতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। মাননীয় বিজ্ঞ আদালতের এই নির্দেশনায় জনগণের মনের কথাই প্রকাশ পেয়েছে। কথায় আছে হাকিম নড়ে কিন্তু হুকুম নড়ে না। জনগণ বিজ্ঞ হাকিমের হুকুমের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কাজেই ঊীঃরহম মেয়রকে বিজ্ঞ হাকিমের হুকুম চলমান রাখার অনুরোধ করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, চেইন অব কন্ট্রোল যদি অব্যাহত না থাকে তাহলে নবাগত মেয়রকে প্রথমেই জনরোষে ফেলে দিবে।
২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কোর্ট পয়েন্ট থেকে চৌহাট্টা ট্রাফিক পয়েন্ট এবং বারুতখানা চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমমুখী জল্লারপাড় রোড পর্যন্ত রিকশা, ভ্যানগাড়ী, লেগুনা, হাতাগাড়ী ইত্যাদি চলাচল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ছিল। কোন অদৃষ্ট শক্তির বলে আবারও রাস্তায় রিকশা, ভ্যানগাড়ী, লেগুনা, হাতাগাড়ী ইত্যাদি বেসুমারভাবে যত্রতত্র চলাচল করছে? দেখে মনে হয় বলার লোক বলে না, দেখার লোক দেখে না, সবাই যেন সজাগ ঘুমের ঘোরে দিনাতিপাত করছে। কেউই সোজা কথা সোজাভাবে বলতে চায় না।
রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রকে কল্পনা করা যায়, দেখা যায় না। কিন্তু সরকার দৃশ্যমান এবং অনুধাবন করা যায়। বিধায় সরকার দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ।
অনুসন্ধানে জানা যায় হকারের চাইতে হকার নেতাদের দৌরাত্ম বড় সমস্যা। হকার সমস্যা সৃষ্টির নেপথ্যে শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। হকার সমস্যা সমাধানে দরকার সমন্বিত ঐক্যজোট। হাল আমলে অনেক দেশে নাগরিক সনদের উদ্দেশ্যে সার্ভিস ফাস্ট এর মূল নীতি বিবৃত হচ্ছে। সিসিক বিভিন্ন পেশা ও প্রান্তসীমার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ব্যবসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিক কর্মসূচি নিতে পারেন। লেখক পরিতোষ সেন তাঁর শৈশবের ঢাকার স্মৃতি নিয়ে একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম ‘জিন্দাবাহার’ অর্থাৎ তাজা বসন্ত। আর মাত্রকিছুদিন আগেও সিলেট নগরবাসী যে তাজা বসন্তের হাওয়া পেয়েছিল তা এখন ভেস্তে গেছে। আশা করব বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী একটি তাজা বসন্তের নগর জনগণকে উপহার দিয়ে যাবেন।
লেখক : কলামিস্ট।