বৃষ্টিপাত ও বৃক্ষরোপণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৩, ১১:৫০:৫৫ অপরাহ্ন
গোলাম সারওয়ার
বৃষ্টি, ¯্রষ্টার অপূর্ব সৃষ্টি। ¯্রষ্টার অপূর্ব এই সৃষ্টি এক সময় সিলেট অঞ্চলে বেশি হতো। সিলেট অঞ্চলে এখন আর আগের মত বৃষ্টি হয় না। যে সময়ে সিলেট অঞ্চলে আগে বৃষ্টিপাতের সংবাদ পাওয়া যেত সে সময়ে এখন ঢাকা কিংবা ঢাকার আশপাশে বৃষ্টি হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
জলবায়ু কিংবা ভৌগোলিক পরিবেশের কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা আমার ধারণা নেই। তবে সবুজায়ন বা বনায়নের কারণে বৃষ্টিপাতের এমন তারতম্য হতে পারে। সিলেটকে এখনও কেন জানি গ্রীণ সিটি এবং ক্লিন সিটি বলা হয়, আমার জানা নেই। বরং গ্রীণ সিটি কিংবা ক্লিন সিটির মর্যাদা যে ক্রমেই হারাতে বসেছে এই সিলেট, কোনো কিছু না ভেবে সহজেই বলা যায়।
ঢাকায় বৃষ্টি হয়, ঢাকার আশপাশেও সিলেটের আগে এখন বৃষ্টি হয়। সিলেটের চেয়ে ঢাকায় বেশ যতœসহকারে সবুজায়ন বা বনায়নের প্রতি মনোযোগের কারণে হয়তো বা বৃষ্টিপাতের এ কারণ হতে পারে।
সে তুলনায় সিলেট কি সবুজায়িত হচ্ছে? না, সিলেটে তেমনটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকারি উদ্যোগে এক সময় বর্ষাকালে গাছ লাগানো হতো। অবশ্য সে গাছগুলো বেড়ে উঠলো কি উঠলো না সেদিকে নজর দেয়া হতো না। ফলে সিলেটে সরকারি উদ্যোগের কোনো গাছ ডাল-পালা মেলেছে, শাখা-প্রশাখা ছেড়েছে বা পত্র-পুষ্পে শোভিত হয়েছে- এমনটা খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন।
শহর উন্নয়নের নামে সিলেটের অনেক গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। সবুজ পাতায় সত্যিকারের গ্রীণ সিটিকে অনেক আগেই হত্যা করা হয়েছে। সবুজের শীতল ছায়া বহুদিন ধরে সিলেটে অনুপস্থিত। তাই দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতেই হয় সিলেটকে আর গ্রীণ সিটি বলা যায় না। ক্লিন সিটি বলারও সুযোগ নেই। যে হারে সিলেটে আবর্জনার স্তুূপ বেড়ে চলেছে, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, ক্লিন রাখতে মানুষও উদাসীন হচ্ছে- ক্লিন সিটি বলা কি যায়?
সিলেট শহর বা শহরের আশপাশ শুধু নয়, পুরো সিলেট অঞ্চল জুড়েই বনায়নের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন উজাড় করে রিসোর্টস নির্মাণ হচ্ছে, আবাসিক ভবন নির্মিত হচ্ছে, প্লট প্লট করে বাণিজ্যিক করে রাখা হচ্ছে বনায়ন উজাড় করে। সবুজের সমারোহ দিন দিন কমে আসায় পরিবেশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। জলবায়ুর পরিবর্তন হওয়ায় বৈরী আবহাওয়া থেকে মুক্তি নেই আমাদের। ফলে বৃষ্টির দিনে বৃষ্টি হয় না, ঠান্ডার সময় ঠান্ডা নেই।
পরিবেশবিদদের মাঝে মাঝে ভাবিয়ে তুললেও আমাদের ভাবিয়ে তুলে না। আমাদের ভাবনায় ছেদ পড়ে যখন- গরমে অস্থির তখন বৃষ্টির অনুভব করি। বৃষ্টির জন্য হাহাকার করে বলে উঠি ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’…
বেমালুম গাছ কাটার পরেও, সৃষ্টির প্রতি এতটা নিষ্ঠুর, নির্দয় আচরণ করার পরেও ¯্রষ্টা আমাদের নিরাশ করেন না। চরম গরমে ¯্রষ্টা আমাদের বারিধারায় শীতল করেন, পুলকিত করেন। এরপরও আমরা সচেতন হই না, স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না। কী এমন হলো আমাদের?
বৃক্ষরোপণ অভিযানের নামে সরকার প্রতি বৎসর কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও সবুজ হচ্ছে না বাংলাদেশ। এর একমাত্র কারণ, দুর্নীতি। দুর্নীতি যে কবে এ দেশ থেকে বিদায় নিবে কোনো সরকারই গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে না। অবশ্য গ্যারান্টি দেয়ার সে সাহসও নেই কোনো সরকারের। কারণ, সরকারের পিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পদের কর্মকর্তা পর্যন্ত দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন শুধু নয়, বিকারগ্রস্তও বলা যায়। বিকারগ্রস্ত কি? এক কথায় বলতে গেলে পাগল। কিসের পাগল? টাকার পাগল। টাকা ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না এই ধরনের বিকারগ্রস্তরা।
গাছ আমাদের ছায়া দেয়। বাঁচার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন দেয়। ফুল দেয়, যা আমাদের মনকে প্রশান্ত করে, উজ্জীবিত করে। গাছ আমাদের পর্যাপ্ত ফল দেয়, যা থেকে আমরা জীবনীশক্তি পাই। এমন এমন গাছ আছে যা আমাদের শরীরে ঔষধ হিসেবে কাজ করে, রোগ নিরাময়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে আমাদের এই গাছগুলো। অথচ বৃক্ষরোপণ অভিযানে সরকারের বিকারগ্রস্তরা বড় বেশি উদাসীন। টাকা টাকা করে জীবনটাই ধ্বংস করে দিচ্ছে।
সবকিছুর পর প্রকৃতি নির্মম প্রতিশোধ নেয়। ভুরি ভুরি উদাহরণ দেয়া যায় এখানে। কিন্তু একটা উদাহরণও আজ দেবো না। উদাহরণগুলো খুঁজে বের করার অনুশীলন না হয় থাকুক আজ সবার জন্য হোমওয়ার্ক হিসেবে। তবে ছোট্ট একটা উদাহরণ না দিলেই নয়। অক্সিজেন নিতে গেলে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে অনেক টাকা গুণতে হয়। সরকারি অর্থে গাছ লাগানোর জন্য আপনার ওপর দায়িত্ব যদি আপনি এড়িয়ে গিয়ে টাকা কামিয়ে থাকেন, তাহলে সে অর্থ হাসপাতালে বা ক্লিনিকে আপনার গুনতে হতে পারে। এটাই প্রাকৃতিক আইন। প্রকৃতির এই নির্মম প্রতিশোধ এড়াতে হলে আপনাকে অবশ্যই অধিক সচেতন হতে হবে। নইলে বিপদ কিংবা বিপর্যয় আপনার জীবনে অনিবার্য, অবধারিত।
প্রতি বর্ষায় বৃক্ষমেলা হয়। আমাদের সিলেটেও এখন বিভাগীয় বৃক্ষমেলা হচ্ছে। বর্ষায় বৃক্ষমেলা হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, বর্ষায় গাছ লাগাতে হয়। বর্ষায় গাছ লাগালে গাছ খুব একটা মরে না। খুব একটা যতœও নিতে হয় না। সম্ভবত এই একটা কারণে সরকারি উদ্যোগের গাছগুলো যতœ নেয়া হয় না। ফলে দুর্নীতি করার সুযোগ চলে আসে। যতœ না নিয়েও যতেœর টাকা সরকারের বিকারগ্রস্তদের পকেটে সহজেই ঢুকে পড়ে। সরকারের এ বিষয়ে ভাবা উচিত যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে হয়।
বর্ষার পরেও গাছ লাগানো যায়- এমনকি সারা বৎসরই গাছ লাগানো যায়। তবে একটু যতœ নিতে হয়, আদর-সোহাগ করতে হয়, এই আর কি। তবে বৃক্ষমেলায় বরাবরই লোকজনের উপস্থিতি কম থাকে। লোকজন বাড়ানোর উদ্যোগ অবশ্য সরকারের নেই। বেসরকারি পর্যায়েও নেই। আমাদের মতে, বৃক্ষমেলায় লোকজনের উপস্থিতি বেড়ে যেত যদি সরকারের বৃক্ষরোপণ অভিযান আলোর মুখ দেখতে পারত। সফলতার গন্ধ সবাই শুনতে চায়, দেখতে চায়, উপলব্ধিও করতে চায়। ব্যর্থতার কাহিনি কেউ শুনতে চায় না, দেখতে চায় না, উপলব্ধিও করতে চায় না।
অনেক কথায় মাথা হয়তো গরম হয়ে গেছে। শ্রাবণের এই বৃষ্টি ধারায় আসুন বৃষ্টিতে ভিজি। না, বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয় না। কৃষক, শ্রমিক বা আপনার শহরের রিকশাওয়ালাকে দেখুন, বৃষ্টিতে ভিজে ওরা কাজ করে। ওদের জ্বর হয় না। আপনার হবে কেন?
লেখক : কলামিস্ট।