মানবপাচার প্রতিরোধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:০১:৩৮ অপরাহ্ন
আমাকে ভালোবাসতে হলে আমার গুণকে যেমন ভালোবাসবে তেমনি দোষত্রুটিগুলিকেও ধৈর্যের সঙ্গে সংশোধন করতে সাহায্য করবে। -এনড্রিট মার্ভেল
পাচার হয় পণ্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। পণ্যের মতো মানুষও পাচার হয় এক দেশ থেকে অন্য দেশে। এই মানবপাচার বিশ্বে বড় একটি অপরাধমূলক কার্যক্রম। আর মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র পাচারের পর মানবপাচার হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরাধমূলক কার্যক্রম। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধি চক্রগুলোর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কার্যক্রম হচ্ছে মানবপাচার। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল দেশে পালিত হয় বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস।
সাধারণত জোরপূর্বক শ্রম, যৌন দাসত্ব অথবা পাচারকৃত মানুষদেরকে ব্যবসায়িক যৌনশোষণমূলক কাজে নিয়োজিত করার জন্য সংঘটিত অবৈধ মানব বাণিজ্যকে মানবপাচার বলা হয়। একটি দেশের অভ্যন্তরে বা এক দেশ থেকে অন্য দেশেও সংঘটিত হতে পারে মানবপাচার। মানব পাচার মূলত নারী এবং শিশু পাচারকেই ইঙ্গিত করে থাকে। আইএলও-র মতে, শুধুমাত্র বলপূর্বক শ্রম দ্বারাই বছরে কমপক্ষে ১৫০বিলিয়ন মার্কিন ডলার লাভ করা হচ্ছে।তাদের মতে- শিশু শ্রমিক, সংখ্যালঘু এবং বেআইনি অভিবাসিরা প্রচন্ডভাবে শোষিত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বেড়েই
চলেছে। প্রতি বছর হাজারো মানুষ পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ছেন। এর কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে কিছু সংখ্যক মানুষ মনে করে একবার বিদেশে পাড়ি জমাতে পারলেই ভাগ্য বদলে যাবে। এ ধরনের ভাবনা থেকে প্রতারণার শিকার হয় তারা। অধিক জনসংখ্যা, অসচেতনতা, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, দ্রুত নগরায়ণ, মাদক ও যৌন ব্যবসা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম শিশু ও নারী পাচারের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করেছে। আবার সুখি ও উন্নত জীবনের প্রলোভনে পড়ে আশ্রয়হীন, অসহায় ও হতাশাগ্রস্ত শহরমুখী নারী ও শিশুরাও পাচারের কবলে পড়ে। বিশেষ করে, মুনাফালোভি পাচারকারি চক্র নারী ও শিশুদের চাকরি, বিবাহ বা অন্য কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিদেশে প্রচার করে চলেছে। বছরের পর বছর এসব পাচারকৃত নারী ও শিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতন সহ্য করছে।তারা ব্যবহৃত হচ্ছে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে।
অবৈধ মানবপাচারকারিদের দমন করতে হবে। এর জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ অভিবাসন। এই সংক্রান্ত প্রচারণা বাড়াতে হবে। সম্ভাবনাময় অভিবাসিদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুসংগঠিত মানব পাচার ও চোরাচালানের নেটওয়ার্কগুলোকে অকার্যকর করে এই অপরাধকে দমন করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রচলিত ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২’-র যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।