বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে দুর্বিষহ কোম্পানীগঞ্জের জনজীবন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৩, ১২:২৯:১৮ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : একদিকে গরম, অন্যদিকে বিদ্যুৎ-বিভ্রাট (লোডশেডিং)। এ দুইয়ে মিলে দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে কোম্পানীগঞ্জবাসীর জীবন। প্রতিদিন নিয়ম করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়াটাই এখানে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, বেলা ডোবার পরই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। টানা দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিরতি নিয়ে বিদ্যুৎ আসছে। এভাবে চলতে থাকে বিদ্যুতের লুকোচুরি। দিনের বেলায়ও একই অবস্থা। থেমে থেমে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে। এতে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটছে। নামাজের সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মসজিদে নামাজ আদায়ে কষ্ট হচ্ছে মুসল্লিদের।
ইসলামপুর গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তামান্না আক্তার জানায়, আগামী ১৭ আগস্ট থেকে এইচএসসি পরীক্ষা। সন্ধ্যার পর থেকে পড়ার আসল সময়। কিন্তু তখন বিদ্যুৎ থাকে না। বই নিয়ে বসার পরপরই চলে যায়। এর মধ্যে দু-একবার বিদ্যুৎ আসলেও বেশিক্ষণ থাকে না। দিনের বেলায়ও একই অবস্থা। ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকায় পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে। উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের কাকুরাইল গ্রামের বাসিন্দা মিছির আলী জানান, প্রতি রাতে তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে শিক্ষার্থীদের যেমন পড়ালেখায় ব্যঘাত ঘটছে। গরমের তীব্রতায় শিশুরা ডায়েরিয়া ও জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ইছাকলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান সাজু বলেন, আমাদের এখানে বিদ্যুৎ কখন যায় আর কখন আসে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। রাতে বিদ্যুৎ প্রায় থাকেই না। দিন-রাত ৮-১০ বার বিদ্যুৎ যায়। এদিকে, উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় এবং গরমের তীব্রতায় শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির পরিমাণও কিছুটা কমে গেছে। সুন্দাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল রায় বলেন, স্কুলের আশেপাশে তেমন কোনো বড় গাছ নেই। আর প্রচন্ড গরম, সেই সাথে বিদ্যুৎ থাকে না। শ্রেণিকক্ষে ভীষণ কষ্ট হয় ক্লাস নিতে। গরমে ছাত্রছাত্রীরা হাসফাঁস করে। এ কারণে তাদের উপস্থিতিও কিছুটা কমে গেছে। তেলিখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরুণ রায় বলেন, তীব্র গরমের মাঝে বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে কষ্ট হয় খুব। গতকাল রোববার ক্লাস চলাকালীন ৫-৬ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। অপরদিকে, লামাডিস্কিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ আক্তার বলেন, ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্কুলের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এরপর থেকে ২২ মাস হতে চলল স্কুলে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় শ্রেণিকক্ষে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। এছাড়া, বিদ্যুতের অভাবে স্কুলের দুইটি ল্যাপটপ, একটি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও সাউন্ড বক্সসহ নানা যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। স্কুলের ফান্ড না থাকায় ট্রান্সফরমার পুনঃস্থাপন করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পরিচালক মুর্শেদ আলম বলেন, চাহিদার তুলনায় আমরা খুব কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এ কারণে দিন-রাত লোডশেডিং হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জের জনভোগান্তির কথা আমি বোর্ড সভায় উপস্থাপন করেছি।
পল্লী বিদ্যুতের কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মৃণাল কান্তি চৌধুরী বলেন, ছাতক গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কম দিচ্ছে। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিন ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু ছাতক গ্রীড দিতে পারছে তিন থেকে সাড়ে তিন মেগাওয়াট। ঘাটতি প্রায় ৫ মেগাওয়াট।