নির্জন হাওরে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে আসা ২৬ বুয়েট শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৩৪
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০২৩, ১১:২৫:১৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে আসা বুয়েটের ২৬ ছাত্রসহ ৩৪ শিক্ষার্থীকে ‘জামাত-শিবির’ সন্দেহে গ্রেফতার করেছে তাহিরপুর থানা পুলিশ। হাওরে বেড়াতে এসে তারা গোপন বৈঠক ও রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সাইদ।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, আটককৃতরা নির্জন টাঙ্গুয়ার হাওরকে গোপন বৈঠকের স্থান হিসেবে বেছে নেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার বিকেল ৪টার দিকে তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন নতুন বাজার (ডাম্পের বাজার) পাটলাই নদী দিয়ে টেকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে তাদের নৌকাসহ আটক করা হয়। পরে তাহিরপুর থানার এস আই রাশেদুল কবির বাদী হয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এবং ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তাহিরপুর বাজারের নৌকা ঘাট থেকে গতকাল সোমবার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে বুয়েটের ২৬ জনসহ ৩৪ শিক্ষার্থী টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। হাওরে ঘোরাঘুরির পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে টেকেরঘাট পর্যটন এলাকায় যাওয়ার পথে তাহিরপুরের নতুন বাজারের সামনে নৌকা পৌঁছালে পুলিশের দুটি স্পিডবোট পর্যটকবাহী নৌকাটি থামায়। পুলিশ চালক আহাদুল মিয়া, মুহাদ্দিস মিয়াসহ ৩৪ শিক্ষার্থীসহ মোট ৩৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের থানা হেফাজত থেকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে করে সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।
তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, ঢাকা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ও নাশকতার অভিযোগে তাদের আটকের পর মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
সন্ধ্যায় গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারহান সাদিক ৩২ জনকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন এবং দুইজনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদের শিশু সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন। কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শিশু তানিমুল ইসলাম (১৫) ও রায়হান ইসলাম সাজিদকে (১৭) শিশু সংশোধনাগারে এবং অন্যদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারদের আদালতে সোপর্দ করার সময় আদালত প্রাঙ্গণে থাকা এক শিক্ষার্থীর বড় ভাই ঢাকার সাভার থেকে আসা মশিউর রহমান দাবি করেন, তার ভাই রাজনৈতিক কোনো কর্মকা-ের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরে আসেনি। তারা এখানে বেড়াতে এসেছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরের সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার বলেন, শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা শিবিরের কোন পর্যায়ের কর্মী এটি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। আদালতের পিপি খায়রুল কবীর রুমেন বললেন, গ্রেপ্তারকৃতরা শিবিরের কর্মী। তাদের গ্রেপ্তারে বড় ধরনের নাশকতা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। এ জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তিনি। পুলিশ সুপার মো. এহসান শাহ্ বললেন, আটককৃতরা সরকারবিরোধী নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তারা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীও রয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মনে করছেন, এরা সবাই ইসলামী ছাত্রশিবির কর্তৃক মোটিভেটেড।
যাদেরকে আটক করা হয়েছে
আটককৃতরা হলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মান্দারখিল গ্রামের আনোয়ারুল হকের ছেলে আফিফ আনোয়ার (২৪), টাঙ্গাইলের সখিপুরের তক্তারচালা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে বখতিয়ার নাফিস (২৪), মাগুরার শালিখার আড়পাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে সাইখ সাদিক (২১), নীলফামারীর জলঢাকার পাইকাপাড়া (চৌকিদার বাড়ি) আবুল কালাম আজাদের ছেলে ইসমাইল ইবনে আজাদ (২১), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের কাছিয়ারা গ্রামের সালেহ আহমদের ছেলে সাব্বির আহমেদ (২১), বাগেরহাটের বারাকপুর (শওকত আলীর বাড়ি) গ্রামের মো. শওকত আলীর ছেলে তাজিমুর রাফি (২০), চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়ার রশিদারঘোনার (গোলাম কাদের মাস্টারের বাড়ি) আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে মো. সাদ আদনান অপি (২২), জামালপুরেরর পঁচাবহলা গ্রামের মো. সেলিম সরকারের ছেলে মো. শামীম আল রাজি (২০), নঁওগার লোহাচুড়া গ্রামের মো. আবদুল কুদ্দুসের ছেলে মো. আব্দুল্লাহ আল মুকিত (২৩), শেরপুর সদর কেয়াটপাড় গ্রামের মো. ফজলুল হক শাহিনের ছেলে জায়িম সরকার (২১), ফেনীর ছাগলনাইয়া থানার ছড়গড়িয়া গ্রামের মো. মাহবুবুল হকের ছেলে হাইছাম বিন মাহবুব (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার জামাদারপাড়ার নাইমুল হকের ছেলে মাহমুদুর হাসান (২২), সাতক্ষীরা সদর থানার ইটগাছা গ্রামের মো. ওবায়দুল্লাহ ছেলে খালিদ আম্মার (২১), রাজশাহীর পবার হরিপুর গ্রামের মো. এন্তাজুল হকের ছেলে মো. ফাহাদুল ইসলাম (২৩), রাজশাহীর বেলপুকুর থানার জামিয়া গ্রামের মো. ওমর ফারুকের ছেলে তানভির আরাফাত ফাহিম (২১), ঢাকার সাভার থানার ওয়ার্ড নং-৭ বাসিন্দা এফ এম আনিছুর রহমানের ছেলে এ টি এম আবরার মুহতাদী (২১), পাবনার শিবরামপুর গ্রামের মাছুদুর রহমানের ছেলে মো. ফয়সাল হাবিব (২০), চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের নয়লাভাঙ্গা গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে আব্দুল বারি (২৪), খুলনা জেলার খালিশপুর থানার সাং-৫/১ হাজী ফয়েজ উদ্দিন রোড, বয়রা সিদ্দিক হেলালের ছেলে আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী (২৮), বাগেরহাটের মোল্লাহাটের কাচনা (সেকান্দার আলীর বাড়ি) সেকান্দার আলীর ছেলে মো. বাকি বিল্লাহ (২৮), কুমিল্লার লাকসামের চিকুনীয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মাহাদি হাসান (২৩), নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের সাদিপুর গ্রামের এ এম এম মুছার ছেলে আলী আম্মার মৌয়াজ (২৫), সিরাজগঞ্জের সলঙ্গার মো. হায়দার আলীর ছেলে টি এম তানভির হোসেন (২৬), ভোলার রসুলপুরের রফিকুল ইসলামের ছেলে মো. রাশেদ রায়হান (২৪), নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরজুবলী গ্রামের মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর ছেলে সাকিব শাহরিয়ার (২৩), নীলফামারীর জলঢাকা থানার সুলতান আলীর ছেলে ফায়েজ উস সোয়াইব (২৪), পতœীতলার গোয়ালগ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে আব্দুর রাফি (২৫), চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার পূর্ব বাকলিয়া (কালামিয়ার বাজার) ইয়াকুব আলীর ছেলে আশ্রাফ আলী (২৫), নরসিংদী সদরের ৩৯/১ মাহতাবউদ্দিন সড়ক, ওয়ার্ড নম্বর ৪ এর মো. মোসাদ্দেক হোসেনের ছেলে মো. মাহমুদ হাসান (২৫), কুমিল্লার বরুড়ার বিষ্ণুপুর গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মো. এহসানুল হক (২৪), চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার গারাংগিয়া হাতিয়ারকুল গ্রামের আব্দুস শুক্কুরের ছেলে মাঈন উদ্দিন (২৪), টাঙ্গাইলের হতেয়া রাজাবাড়ির বর্তমানে বুয়েট কোয়ার্টারের বাসিন্দা ও আবু হানিফের ছেলে রায়হান আহমেদ সাজিদ (১৭), বাগেরহাটের বারাকপুর গ্রামের মো. হায়াত আলীর ছেলে তানিমুল ইসলাম (১৫) এবং নীলফামারীর ডিমলার বর্তমানে ঢাকার যাত্রীবাড়ী গণিরোডের ভাঙ্গাপ্রেসের বাসিন্দা আবেদ আলীর ছেলে মো. আব্দুল্লাহ মিয়া (১৮)।