বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ আগস্ট ২০২৩, ৫:০৩:৫৬ অপরাহ্ন
মাতৃভূমিকে যে ভালোবাসতে পারে না, তার পক্ষে অন্য কিছুকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। -বায়রন।
দেশে শুরু হয়েছে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। এই সপ্তাহ পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কৃষ্টি পুনরুদ্ধার। ওয়ার্ল্ড এলায়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং একশন এর উদ্যোগে এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় ১৯৯২ সাল থেকে প্রতি বছর আগস্ট মাসের এক তারিখ থেকে পালিত হয় বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। বাংলাদেশেও প্রতি বছর সপ্তাহ বেশ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। এই দিবস ও সপ্তাহ পালনকালে শিশুদের মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
মায়ের দুধ শিশুদের সর্বোৎকৃষ্ট খাবার। বলা হয়ে থাকে মায়ের দুধ সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি বিশেষ আশীর্বাদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানও মায়ের দুধকে শিশুদের সর্বোৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার প্রথম খাবারই হচ্ছে মায়ের দুধ। শুধু তাই নয়, শিশু পৃথিবীতে এসে প্রথম মায়ের যে ‘শাল দুধ’ খায়, সেটা হচ্ছে তার সারাজীবনের জন্য রোগ প্রতিষেধক টিকা। আসল কথা হলো, মায়ের দুধের প্রকৃত মূল্যায়ন পৃথিবীর সবকিছুর উর্ধে। শিশুর পুষ্টি, বেঁচে থাকা এবং বেড়ে ওঠার জন্য মায়ের দুধই সর্বোত্তম ভূমিকা রাখে। শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং শিশুদের বিভিন্ন রোগ কমানোর জন্য যেসব জনস্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় যেমন টিকাদান, ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ, পরিবার পরিকল্পনা এবং অপুষ্টি দূরীকরণ এইসব কার্যক্রমের সফলতায় সাহায্য করতে পারে মায়ের দুধ। তাছাড়া, মায়ের দুধ মা ও শিশুর মধ্যে যে মমতার গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলে তা জগতের উর্ধে।
আবহমান বাংলার নারীরা সন্তানদের জন্য বুকের দুধকেই প্রধান খাবার হিসেবে জেনে এসেছেন। বুকের দুধের উপকারের ব্যাপারে তারা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সেভাবে না জানলেও শিশুদের খাবার হিসেবে বুকের দুধের বিকল্প কিছুই ভাবেন নি। কিন্তু এই ধারণা অনেকটাই পাল্টে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। তখন থেকে বিশেষ করে পাশ্চাত্যের প্রভাবে আমাদের দেশে মায়ের দুধের বিকল্প নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। উৎপাদন হতে থাকে ‘মায়ের দুধের বিকল্প’ গুঁড়ো দুধ। তথাকথিত আধুনিকতার দোহাই দিয়ে এক শ্রেণির মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত রেখে বাজার থেকে কেনা গুঁড়ো দুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন বিশ্বের গুঁড়ো দুধ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের মায়ের দুধ না খাওয়ানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে থাকে মায়েদের। এক পর্যায়ে তারা সফলও হয়। আর মায়েরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ে টিনজাত দুধ আর ফিডারের ওপর।
আসল কথা হলো, শিশুদের মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত করা মানে তাকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। তাছাড়া, গুঁড়ো দুধ খাওয়ানোর ফলে অনেক সময় শিশুদের উপকারের পরিবর্তে অপকারই হচ্ছে বেশি। এই দুধ থেকে শিশুরা নানা অসুখ-বিসুখের শিকার হচ্ছে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়ের দুধ না খাওয়ানোর জন্য শিশুদের পুষ্টিহীনতা, পড়াশোনায় অনগ্রসরতা, ডায়াবেটিস, মেনিনজাইটিস, ক্যান্সার, এলার্জির মতো রোগও হতে পারে। অথচ, শিশুদের এই গুঁড়ো দুধের পেছনে মা বাবাকে ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সরকারসহ বিভিন্ন মহল মায়ের দুধের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর পক্ষে নানাভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বেশির ভাগ মায়েরা এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করছেন। মায়ের দুধের ‘বিকল্প’ হিসেবে বা ‘সহযোগি হিসেবে গুঁড়ো দুধের প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে এটা অত্যন্ত জরুরি। মায়ের দুধ পান করে সুস্থ, সবল, মেধাবি প্রজন্ম গড়ে উঠুক; বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।