শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর অনুমতি পেলো সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ আগস্ট ২০২৩, ৫:১০:২৮ অপরাহ্ন
প্রাথমিকভাবে শান্তিগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটসহ দুটি স্থান ক্লাসের জন্য নির্ধারণ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরুর অনুমোদন পেয়েছে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সুনামগঞ্জসহ আরো দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষাকার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়।
সুনামগঞ্জ ছাড়া বাকি দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে-কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য অর্জন ও অংশগ্রহণমূলক পাঠদান নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি বিষয়ে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দেয়া হয়।
সূত্রমতে, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত অনুষদ, বিভাগ ও জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের অধীনে গণিত, পদার্থ, রসায়ন ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এবং প্রয়োজনীয় জনবল অনুমোদন দেয়া হয়। সভায় শিক্ষাকার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য মেধাবী, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া হয়।
গতরাতে দৈনিক সিলেটের ডাক-এর পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আবু নঈম শেখের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে শান্তিগঞ্জ টেক্সটাইল ইন্সটিটিউটে দুটি এবং শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হবে। ক্লাস শুরুর দুমাস আগে এ বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত সভায় ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহের, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এ কে এম জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আবু নঈম শেখ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর-এর ভিসি প্রফেসর ড. কাজী সাইফুদ্দীন, ইউজিসি’র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুর রহমানসহ ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রফেসর আলমগীর বলেন, শর্তসাপেক্ষে নতুন তিন পাবলিক বিশ্ববদ্যিালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্যে অনুষদ, বিভাগ ও জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি উপাচার্যদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ল্যাব ব্যবহারে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করার পরামর্শ দেন।
শিক্ষার্থী ভর্তি বিষয়ে প্রফেসর আলমগীর বলেন, উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা নির্ধারিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণা পরিচালনা সুবিধাদির ওপর।
বর্তমানে ৫৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া, নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করবে তার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে ইউজিসি।
সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। এর আগে ৭ নভেম্বর এটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হয়। শিক্ষামন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জায়গা নিয়ে সুনামগঞ্জে দেখা দেয় তুমুল বিতর্ক। এরপর আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হিসেবে সুনামগঞ্জের ‘দেখার হাওরের পারে’র কথা উল্লেখ করা হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন প্রস্তুত করতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি কমিটি করে দেয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আইনটি শিক্ষামন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।এরপর ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকে খসড়া আইনটি নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপরের বছরের শেষের দিকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০২০ সংসদে পাস হয়।
এদিকে, চলতি বছরের ১৪ জুন গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) গণিত বিভাগে প্রধান প্রফেসর মো. আবু নঈম শেখকে নয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।