রাজার পাখিনিধন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ২:২৩:০৭ অপরাহ্ন
আবু মালিহা
ছোট্ট বন্ধুরা, আজ তোমাদের একটি গল্প শোনাব। এ গল্প শুধু গল্প নয়; রূপকথারও নয়! বাস্তব ঘটনা এবং একটি দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষাও।
এশিয়া মহাদেশের বৃহৎ দেশ চীন। যে চীনের নাম শুনলে আমরা পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যগুলোর মধ্যে অন্যতম চীনের প্রাচীরকেই জানি। কথিত আছে, চীনের প্রাচীরের উপর দিয়ে ৭টি ত্যাজি ঘোড়া দ্রুত বেগে দৌড়াতে পারে। এখন চিন্তা করো কত প্রশস্ত তার প্রাচীরের উপরিভাগ।
সেই দেশেরই এক সময় খুবই প্রতাপশালী রাষ্ট্রনায়ক ছিল। যার নাম মাও সেতুং। যাকে আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়! তারই শাসনামলের একটি নৃশংস ঘটনার জন্য প্রায় ৪ কোটি মানুষ মৃত্যু মুখে পতিত হয়েছিল। ইতিহাসে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
সে সময়ে আমেরিকা, রাশিয়া ও ব্রিটেন ছিল খুবই উন্নত রাষ্ট্র ও সম্পদশালী। এবং অর্থনৈতিকভাবে তারা ছিল সবার উপরে। জ্ঞান-বিজ্ঞানেও উন্নত এবং শক্তিশালী। চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা তাদের থেকে ছিল দুর্বল এবং জনসংখ্যা ছিল বিশ্বে প্রথম। যার ফলে জনগনের সুখ সুবিধা বৃদ্ধিতে কষ্ট হচ্ছিল এবং খাদ্য শস্যের ভান্ডার পর্যাপ্ত ছিল না। তাই মাও সেতুং ভাবল কী করে দেশের খাদ্য ভান্ডার বা ফসল বৃদ্ধি করা যায়। তাই সে প্রাণি বিজ্ঞানীদের দ্বারা একটি জরিপ চালিয়ে ছিল পশু পাখিরা কি পরিমাণ খাদ্য ভক্ষণ করে তার একটি হিসেব দিতে বলা হল।
তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং তথ্য জরিপের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রধানকে জানাল যে, শুধু একটি চড়–ই পাখি বছরে সাড়ে চার কেজি শস্য খেয়ে ফেলে সে হিসেবে সারা দেশের লক্ষ কোটি চড়–ই পাখি হাজার লক্ষ টন খাদ্য শস্য খেয়ে ফেলে। এই হিসেব তাকে হতভম্ব করে দিল! চিন্তা করতে লাগল যে এত খাবার রক্ষা করতে হলে পাখিগুলিকে মেরে শেষ করতে হবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। সমস্ত রাষ্ট্রে ঘোষণা করে দিল যে, এখন থেকে চড়–ই পাখি মারতে হবে এবং খাদ্য শস্য রক্ষা করতে হবে। নইলে আমরা জাতি হিসেবে বাঁচতে পারব না এবং রাষ্ট্রও উন্নত হবে না। সেই থেকে শুরু হল রাষ্ট্রীয় ফরমান জারি ও প্রশাসনের জনবল সহ দেশের সকল জনগণকে পাখি মারার উৎসবে নিয়োজিত করল। সেই সময়টি ছিল ১৯৫৮ -৫৯ সাল পর্যন্ত।
চীনে সেই ঘটনার পর শুধু চড়–ই নয় আরও যত পশু পাখি আছে সেগুলিও মারতে লাগল। এক পর্যায়ে দেখা গেল চীন ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়েছিল। মহান রবের পশু পাখি সৃষ্টির লক্ষ্যই হচ্ছে মানব কল্যাণ এবং পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করা। রাষ্ট্রের একজন দুষ্ট এবং জালিম প্রকৃতির মানুষ যখন শাসন কর্তা হয় তখন জনগনের মাঝে দুর্ভোগ, অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। প্রকৃতির অভিশাপ হিসেবে আপতিত হয়। অর্থাৎ আল্লাহর গজব যাকে বলে।
যার ফলে পশু পাখিদের দ্বারা যে উপকার হত, তা বিনষ্ট হতে লাগল, ফসলের উৎপাদন কমে গেল। প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয় সৃষ্টি হল এবং ভারসাম্যহীনতায় গোটা দেশের উপর প্রভাব পড়ল। খাদ্য শস্যের অভাবে পরবর্তী দু’বছরে সেই সময়ের হিসেব অনুযায়ী চীনে প্রায় ৪ কোটি মানুষ মারা গেল। পৃথিবীতে এমন বিপর্যয় বা মানুষের মৃত্যু ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তা ইতিহাসে ধ্বংসের স্বাক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। অর্থাৎ ¯্রষ্টার চিরন্তন ও শাশ্বত ধারার বিপরীতে যারাই পদক্ষেপ নিয়েছে তাদের উপর নানা প্রকার ধ্বংস ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
প্রকৃতির সকল সৃষ্টি মানুষের কল্যাণের জন্যই সৃষ্টিকর্তা দয়া করে আমাদের দিয়েছেন। সকল প্রাণির স্বাভাবিক চলাফেরা বা তাদের দায়িত্ব থেকে প্রতিরোধ সৃষ্টি করলে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিপত্তি বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় আর তখনি প্রতিটি প্রাণির জীবননাশ ঘটে। পাশাপাশি মানবজীবনে তার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।