কলাবাড়ি-দয়ারবাজার সড়কে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ৩:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার কলাবাড়ি-দয়ারবাজার সড়কের ভোগান্তি ছিল দীর্ঘদিনের। ভাঙ্গা সড়ক আর হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়ে চলাচল করতে হতো লোকজনকে। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে চলা এই ভোগান্তির অবসান হয়েছে। সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সড়কটি নতুন করে নির্মাণ করে দিয়েছে। এতে স্বস্তি এসেছে সড়কে চলাচলকারীদের মাঝে।
কোম্পানীগঞ্জ এলজিইডি অফিস জানায়, ধলাই সেতু-কলাবাড়ি-দয়ারবাজার সড়ক সংস্কারে ১৪ কোটি ৪৬ লাখ ১ হাজার ৬১৪ টাকা বরাদ্দ দেয় এলজিইডি। ৩.৭৫ মিটার এ সড়কের কাজ পায় মেসার্স মমিনুল হক এবং মেসার্স এম রহমান (জেভি)। ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ সড়কটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৫ জানুয়ারি কাজ শুরু করে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১০ মাস পর কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত মাসের শেষ সপ্তাহে কাজ শেষ হয়।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলা সদরের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কলাবাড়ি, কালিবাড়ি, দয়ারবাজার, কালাইরাগ, বালুচরসহ পূর্ব ইসলামপুর ও উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের ১০-১৫টি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে এই সড়ক। কলাবাড়ি উচ্চবিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ভাটরাই উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সহজে যাতায়াত করতে পারছে। ওই এলাকার পর্যটনেও এসেছে নতুন প্রাণ। এ সড়ক ব্যবহার করে পর্যটকরা সহজেই উৎমা ও তুরং ছড়ায় যেতে পারছেন।
বালুচর গ্রামের ব্যবসায়ী বাহার আহমেদ রুহেল বলেন, বৃষ্টির সময় কাদা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালির কারণে এই রাস্তায় চলাচলই করা যেত না। এলজিইডি বিভাগ কাজটি করে দিয়েছে বলে তাদের ধন্যবাদ। তবে, দয়ার বাজার পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্পটে স্পিড ব্রেকার’ থাকলে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।
ইজিবাইক চালক রইছ আলী বলেন, দীর্ঘদিন বেকার ছিলাম। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় ইজিবাইক কিনেছি। এটি চালিয়ে এখন সংসারের খরচ যোগাতে পারছি।
কলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুবাইয়া আক্তার জানায়, আগে আমাদের স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হতো। এখন পাকা হওয়ার কারণে সহজেই স্কুলে যেতে পারছি।
কালাইরাগ গ্রামের বাসিন্দা ও কোম্পানীগঞ্জ ছাত্রপরিষদের সভাপতি হেলাল আহমদ জানান, আগে উপজেলা সদরে যাওয়ার জন্য অনেক পথ ঘুরতে হতো। এখন সহজেই সেখানে যাওয়া যায়।
স্থানীয় শান্তিরবাজারের রড-সিমেন্টের ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম জানান, সড়কের কারণে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে। দোকানের মালামাল আনা বেশ সহজতর হয়ে উঠেছে।
মাঝেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের সদস্য তামান্না আক্তার হেনা বলেন, সড়কটি হওয়ায় সহজেই পরিবহন করা যাচ্ছে বিভিন্ন পণ্য। সহজে চলাচল করছে ইজিবাইক, মোটরবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রো বাসসহ অন্যান্য যানবাহন।
কলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম (ঠান্ডা স্যার) বলেন, সড়কটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি এনেছে। এটি হওয়ায় এলাকার আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতিতেও আসবে উন্নতি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজদ বলেন, মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ পার হলেও কাজ হচ্ছিল না। শুরুতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন এলাকাবাসী। অবশেষে নতুন সড়ক পেয়ে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্তা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অখিল বিশ্বাস বলেন, ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। আপাতত সড়কটি গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আমাদের মন্ত্রী ইমরান আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে সড়কটি উদ্বোধন করবেন।
উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ খান বলেন, গুরুত্ব বিবেচনায় সড়কটি যথাযথ মান ও প্রশস্ত করে (আরসিসি) নির্মাণ করা হয়েছে। এলজিইডির অধীনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আরও কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজতর হবে।
প্রসঙ্গত, কলাবাড়ি-দয়ারবাজার সড়কের ভোগান্তি নিয়ে দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ২০২১ সালের ১৬ মার্চ দৈনিক সিলেটের ডাক-এ ‘ধলাই সেতু-কলাবাড়ি-দয়ারবাজার সড়কের বেহাল দশা’- কর্তৃপক্ষের নজর নেই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপর ৩১ মার্চ সড়কটি পরিদর্শনে আসেন সিলেট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর। বিষয়টি নিয়ে অফিসিয়ালি কাজ শুরু করেন কলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম।