সড়ক দুর্ঘটনার কারণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৩:২৭ অপরাহ্ন
অন্যায়কারি তার দুষ্কর্মের রশিতেই বাঁধা পড়বে এবং একদিন না একদিন তাকে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। -হযরত সোলায়মান রা.
সিলেট বিভাগে দেড় মাসে বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় ৬৮ জনের প্রাণ ঝরেছে। একটি সহযোগি পত্রিকায় এ খবর বেরিয়েছে। এদিকে, প্রাণঘাতি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১৬টি প্রধান কারণ চিহ্নিত হয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। তাদের মতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারা দেশে দুই হাজার ৭৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় দুই হাজার ৮৯৮ জন নিহত ও ৪ হাজার ৭২০ জন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে এক হাজার ৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৮৮।
সড়কে দীর্ঘায়িত হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এ নিয়ে হচ্ছে গবেষণা, প্রণীত হয়েছে আইন। কিন্তু থামানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। উল্লিখিত জরিপে বলা হয়- সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল আন্তরিক থাকলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর এক শ্রেণির কর্মচারির দায়িত্বশীলতার ঘাটতিও রয়েছে। পরিবহন খাতের ওপর মালিক ও শ্রমিক নেতাদের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার, প্রভাবশালীদেন হস্তক্ষেপ এবং চালকসহ সাধারণ শ্রমিক, যাত্রি ও পথচারিদের অসচেতনতাও দুর্ঘটনার জন্য দায়ি। দুর্ঘটনার জন্য দায়ি ১৬টি কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, অদক্ষ, অসচেতন ও অসুস্থ চালক, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং, চালক ও সহকারিদের মানসিক অবসন্নতা, সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ
বাঁক, মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণার অভাব ইত্যাদি। এভাবে প্রতিনিয়ত হচ্ছে গবেষণা। চিহ্নিত করা হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণ। কিন্তু কোনকিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। বিশেষজ্ঞগণ প্রায় সময় দুর্ঘটনা রোধে বিশেষ বাহিনী গঠনেরও দাবি উত্থাপন করেন। তবে আসল কথা হলো, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ থেকে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করতে হবে। চালকদের বেপরোয়া প্রতিযোগিতার মনোভাব পরিহার করতে হবে। লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে। ট্রাফিক আইনকে কার্যকর করা, ঘুষমুক্ত রাখা ও চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরি। সড়কে পুলিশ ও মোবাইল কোর্টকে আরও বেশি সক্রিয় করে তুলতে হবে। সর্বোপরি, সড়কে চাপ কমাতে নদী ও রেলপথকে আরও সক্রিয় করা যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ি প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১০ লাখের বেশি লোক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এবং প্রায় পাঁচ কোটি লোক আহত হয়। সড়ক দুর্ঘটনাকে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের প্রাণহানির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। উন্নত দেশগুলির তুলনায় উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলিতে সড়ক নিরাপত্তা অনেক কম এবং সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের হার অনেক বেশি। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষে সরকার সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ প্রণয়ন করে। এই আইন ১ নভেম্বর ২০১৯ থেকে কাগজেপত্রে কার্যকর হলেও আইনটি পুরোপুরি এখনো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।