নার্সিং শিক্ষায় ক্যারিয়ার গঠন করলে নিজের ও আর্তমানবতার সেবা করা যায় – দানবীর ড. রাগীব আলী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ৫:১৩:৪১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের বিএসসি নার্সিং এর ১৪তম ব্যাচ, পোস্ট বেসিক বিএসসি নার্সিং এর ১০তম ব্যাচ ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি ১৩তম ব্যাচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, লিডিং ইউনিভার্সিটি, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, অনেক কিছু চুরি করা যায়, কিন্তু পড়াশোনা চুরি করা যায় না। এটা জীবনের প্রতিটি মুতূর্তে কাজে লাগে। নার্সিংয়ের মতো পেশায় ক্যারিয়ার গঠন করলে নিজের এবং আর্তমানবতার সেবা করা যায়। তিনি বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজ উন্নত পড়াশোনার জন্য দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। যার জন্য দেশের বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই কলেজে ভর্তি হয়েছেন। নিশ্চয় ভালো পড়াশোনা হয় এর জন্য সাড়া পড়েছে। এর জন্য তিনি অভিজ্ঞ শিক্ষকমন্ডলীকে ধন্যবাদ জানান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ১নং ল্যাকচার গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ডা: আয়েশা বেগম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আবেদ হোসেন, উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: এ কে এম দাউদ, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: তারেক আজাদ ও রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার ও দৈনিক সিলেটের ডাক এর সম্পাদক আব্দুল হাই। বিএসসি নার্সিং একাদশ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্যামলী সরকার ও অনিক দেবনাথ এর যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নার্সিং কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা: নাদিরা বেগম। নবাগত শিক্ষার্থীদের শপথ পড়ান কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ। কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ফাহিমা রহমান পলি ও নবাগত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন মফতাসিন আফরিন মীম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, আমি বিলেতে যেখানে যাই সেখানে গিয়ে রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও রাবেয়া খাতুন নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখা পাই। তখন ভালো লাগে। তিনি ফিলিপাইন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ নার্স সাপ্লাই করে ফিলিপাইন। তাদের সার্ভিস খুব ভালো। যেটি আমাকে উৎসাহিত করে। দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের দক্ষ নার্সরাও দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়াবে। পরিবার ও দেশের জন্য অবদান রাখবে।
ড. রাগীব আলী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর কথা স্মরণ করে নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাবেয়া মানবদরদী ছিলো। তিনি হাসপাতালে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের খোঁজ নিতেন। মানুষের সেবাই ছিল তাঁর মননে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা মোঃ আবেদ হোসেন নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা এমন একটি পেশায় এসেছে, যেখানে নিজেকে সর্বদা বিলিয়ে দিতে হবে রোগীর সেবায়। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সেটা করতে হবে মানুষের পাশে থাকার লক্ষ্যে। তিনি বলেন, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতাই এই কলেজের সুনাম এনে দিয়েছে। এরজন্য মনে রাখতে হবে শৃঙ্খলার ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবে না। আবেদ হোসেন বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: একে এম দাউদ বলেন, চিকিৎসক, নার্স, আয়া সবার সমন্বয়ে টিমওয়ার্কই মূলত একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে কাজে লাগে। এরমধ্যে রোগীদের সবচেয়ে বেশি কাছে থাকেন নার্সরা। এরজন্য রোগীদের সুস্থ করে তুলতে হলে নার্সদের সচেতন হতে হবে। রোগী ও রোগীদের স্বজনদের সাথে, ডাক্তারদের সাথে কি আচরণ করতে হয় তার ধারণা রাখতে হবে। তোমাদের দারুন একটি ক্যাম্পাস রয়েছে। যার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিজেকে আলোকিত করতে হবে। শপথের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।
জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: তারেক আজাদ বলেন, নার্সরা সেবা দেয়ার শপথ নিয়েছেন। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিজেকে সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।
নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগী হতে হবে। নিজেদের ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল হাই বলেন, নার্সিং একটি মহৎ পেশা। পড়াশোনা করে ভালো ফলাফল করে যারা ক্যারিয়ার গঠন করবেন, তাদের কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এগিয়ে যাওয়ার শুরু মাত্র। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এরপরই আসবে সুবর্ণ সুযোগ। মানবসেবার এই সুবর্ণ সুযোগ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ডা: আয়েশা বেগম বলেন, মাত্র ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের। এখন প্রতিবছর ২৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছেন। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে বেরিয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চাকুরি করছেন। বিদেশেও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন। তিনি বলেন, শৃংখলার ব্যাপারে কোন ছাড় নয়, সে বিষয়টি নবীন শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে।