‘চোর’ থেকে সাবধান সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ৫:২৪:৪৩ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম
সোবহানীঘাট রহিম টাওয়ারে কাজ শেষ করে বন্দরবাজার আসার জন্য সিএনজি অটোরিক্সার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মো. নুরুল হক। এ সময় একটি সিএনজি অটোরিক্সা বন্দরবাজার যাবে বলে পাশে দাঁড়ালে তিনি ওঠে যান। গাড়িতে চালক ছাড়াও আরো দুইজন যাত্রী ছিলেন। কিছুদূর আসার পরই ওই যাত্রী দুইজন নেমে পড়ে। তারও একটু পরে চালক বলে উঠেন, ‘ভাই আমার একজন জরুরী রোগী আছেন, গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলবো। আপনি দয়া করে নেমে অন্যগাড়ি নিয়ে নেন।’ চালকের কথা বিশ্বাস করে নেমে কয়েক কদম হাঁটার পর নূরুল পকেটে হাত দিয়ে দেখেন, প্রায় ষাটহাজার টাকা মূল্যের ‘এ প্লাস’ মডেলের মোবাইলটি নেই। ততক্ষণে সিএনজি অটোরিকশা চলে গেছে অনেক দূর। ঘটনাটি গত সোমবারের।
নুরুল হক একজন সাংবাদিক। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। নুরুল হকের মতো গত দুইমাসে সিএনজি অটোরিক্সাতে এ রকম বেশ কয়েকটি মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে সিলেট নগরীতে। তবে অধিকাংশ মানুষই মোবাইল চুরি কিংবা হারানোর পর পুলিশের শরণাপন্ন হতে চান না। আবার অনেকে থানায় জিডি করার পর মোবাইল ফেরত পেয়েছেন-এমন বহু নজিরও রয়েছে। কতোয়ালী থানা পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শুধু মোবাইল চুরির ঘটনায় প্রতিদিন সত্তর থেকে আশিটি সাধারণ ডায়েরী হচ্ছে।
নুরুল হক ছাড়াও গত মাসে নাইব আহমদ নামে এক মাদরাসা পড়–য়া কিশোর একইভাবে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে সব খুইয়ে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সিলেটের একটি মাদরাসার ছাত্র নাইব কুলাউড়া থেকে বাসযোগে কদমতলী এসে নামেন। সন্ধ্যার পর পায়ে হেঁটে ক্বীনব্রীজের কাছাকাছি চলে আসামাত্র একটি সিএনজি অটোরিক্সা তার পাশে এসে দাঁড়ায়, বন্দরবাজার বলে গাড়িতে তুলে। নাইব ছাড়াও গাড়িতে যাত্রীবেশী আরো দুইজন যাত্রী ছিলেন। ক্বীনব্রীজের মধ্যবর্তী স্থানে আসার পরপরই ওই দুইজন যাত্রী গাড়ির দুইদিকে থাকা পর্দা তুলে নাইবকে চাকু ধরে জিম্মি করে ফেলে। তারপর সে আর কিছু বলতে পারেননি। সন্ধ্যার পর মালনিছড়া চাবাগান এলাকায় গাড়ি থামিয়ে তার কাছে থাকা সাড়ে তিনহাজার টাকা নিয়ে যায় ওই চক্র। পরে মাদরাসায় না গিয়ে কোনোরকম নগরীর মাছুদিঘীরপাড়ে এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় ওঠে ঘটনার বর্ণনা করেন ওই কিশোর।
ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিলেট নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র সিএনজি অটোরিক্সাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক ছিনতাই কর্মকান্ড। তাদের কবলে পড়ে শুধু মোবাইল নয়, অনেকে হারাচ্ছেন টাকা পয়সা, পাসপোর্ট, অতি গুরুত্বপুর্ণ কাগজপত্র। বেশী শিকার হচ্ছেন গ্রাম থেকে শহরে আসা নিরীহ মানুষগুলো।
কলেজ পড়–য়া মো. নূরমান হোসেন ইমন। সিলেট নগরীর রায়রগর এলাকার বাসিন্দা। আইএলটিএস করছেন একটি প্রতিষ্ঠানে। গত দুই সপ্তহে আগে দাদাপীরের মাজার এলাকা থেকে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় ওঠেন। এসময় গাড়িতে অন্যযাত্রীরাও ছিলেন। মধুবন এসে গাড়িভাড়া দিয়ে কয়েক কদম হেঁটে পকেটে হাত দিতেই ঘটলো একই ঘটনা, দেখলেন ‘এস-ওয়ান’ মোবাইলটি নেই। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে দেখেন সিএনজি অটোরিকসাটি চলে গেছে। উপরে বেশ কয়েকটি মোবাইল চুরির ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হলেও থানায় জিডি করেছেন মাত্র একজন, সাংবাদিক নুরুল হক। এভাবে প্রতিদিন যাত্রীবেশী মোবাইল চোরচক্রের কবলে পড়ে মোবাইল হারাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু, থানা পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন, এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। অথচ কতোয়ালী থানা পুলিশ সূত্র বলছে, প্রতিদিন শুধু মোবাইল চুরির ঘটনায় ৭০ থেকে ৮০টি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) হচ্ছে।
আলাপকালে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট প্রকাশ দেবনাথ জানান, ‘সড়কে বের হলে প্রায় সময় এ ধরণের ঘটনার খবর পাই। কত কয়েকদিন আগে একজন সিএনজি অটোরিক্সার যাত্রীবেশী চোরকে হাতেনাতে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতেও দেখেছি।’ এ সকল চোরের ব্যাপারে পুলিশ সবসময় সোচ্চার রয়েছে বলেও তিনি জানান।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এই অপরাধী চক্র ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। গরমের সময় সিএনজি ভাড়া নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর গরমে হাঁপিয়ে উঠার ভাব ধরে। তারা কোনো ঠান্ডাপানীয় বা ডাবের দোকানের সামনে সিএনজি থামাতে বলে।
নিজেরা কিছু খাওয়ানোর সময় ভাব জমিয়ে অন্যযাত্রীদেরও খেতে বলে। এ সময় কৌশলে অন্যযাত্রীকে কোল্ড ড্রিংকের সাথে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়া হয়। চেতনানাশক মেশানো ড্রিংক বা পানি খেয়ে সিএনজিতে ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যে যাত্রী যখন অচেতন হয়ে পড়ে তখন তারা কাজ সেরে পালিয়ে যায়।
প্রতিদিন এতগুলো মোবাইল চুরি, এতগুলো জিডি নিয়ে কথা হলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইলিয়াস শরীফ বলেন, ‘এটা তো ভয়ংকর অবস্থা। আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।’