প্রসঙ্গ : নদীভাঙন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৮:৩২ অপরাহ্ন
নিজের চিন্তা, মতামত এবং কাজকর্মকে সর্বাপেক্ষা উত্তম মনে করা এবং অন্যের সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করার নামই আত্মপ্রশস্তি এবং ইহা একটি মারাত্মক চারিত্রিক দোষ। -ইমাম গাজ্জালি
জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়ছে নদীভাঙন। সেইসঙ্গে শহরে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। অর্থাৎ নদীভাঙনে দেশে প্রতি বছর বিলীন হচ্ছে তিন হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমি। আর বাস্তচ্যুত হচ্ছে ২৫ হাজার মানুষ। তারা জমি, ভিটেমাটি হারিয়ে শহরাঞ্চলে অসহায় জীবনযাপন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে। অকালবৃষ্টি ও বন্যা, নদীর দিক পরিবর্তন এবং সুরক্ষা বাঁধ না থাকায় ক্ষয়ক্ষতিও বেড়ে চলেছে।
এ দেশে নদীভাঙন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীমাতৃক এই দেশে জনগোষ্ঠির বড় অংশের জীবনপ্রবাহ নদীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় আবহমানকাল থেকে। কারণএদেশের মানুষকে জীবন-জীবিকার তাগিদে নদীর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। আবার নদীর রুদ্ররোষে সর্বস্বান্ত হওয়ার ঝুঁকিও তাদের মোকাবেলা করতে হয়। আর সেটা হচ্ছে নদীভাঙন, বন্যা ইত্যাদি।নদীভাঙন এক প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীর সমুদ্রে গিয়ে পড়ার সময় সাধারণত সমুদ্রের কাছাকাছি হলে তীব্র গতিপ্রাপ্ত হয়। তখন পানির তীব্র তোড়ে নদীর পাড় ভাঙতে থাকে। নদীর পানির স্রোতে নদীর পাড় ভাঙার এই অবস্থাকে নদীভাঙন বলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষাকালে উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের দরুন নদীর পানি বেড়ে যায় এবং তা প্রচন্ড গতিতে সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়। এসময় উপকূলীয় অঞ্চলের নদীসংলগ্ন স্থলভাগে পানির তীব্র তোড়ে সৃষ্টি হয় নদীভাঙনের। নদীভাঙন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দুর্যোগ যার কারণ নদীর গতিপ্রকৃতির দ্রুত পরিবর্তন। প্রতিবছর প্রায় ৫,০০০ থেকে ৬,০০০ হেক্টর জমি নদীভাঙনে হারিয়ে যায়। এই ভাঙনের ফলে প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদীভাঙনের ফলে এদেশে প্রতিবছর ২৫ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। আর নদী ভাঙনের ফলে দেশের সব ছোট-বড় শহরেই এই বাস্তচ্যুত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামের চেয়ে নগরে জনসংখ্যার ঘনত্ব ও চাপ বেড়েছে এবং নগরে সম্পদের ব্যবহার, আবাসন, স্বাস্থ্য খাত, খাদ্য নিরাপত্তা ও সীমাবদ্ধ কর্মক্ষেত্রের ওপরও চাপ তৈরি হচ্ছে।
ইতোপূর্বে দেশের নদী শাসন ও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধে পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করার কথা শোনা গিয়েছিলো। এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গন থেকে সারা দেশের নদীপাড়ের বাসিন্দাদের রক্ষা করা সম্ভব হবে। বছর তিনেক আগে এমন প্রকল্প গ্রহণের কথা জানা গেলেও তার কোন বাস্তবায়ন নেই। তাছাড়া, দেশে প্রতি বছরই নদীভাঙন রোধে ব্যয় হয় কোট কোটি টাকা। কিন্তু তাতো কোন লাভ হয় না। বরং সরকারি অর্থ চলে যাচ্ছে লুটেরাদের পকেটে। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।