জগন্নাথপুরে নিঃসন্তান বৃদ্ধ নারীর বসতভিটা ফিরিয়ে দিল পুলিশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ৩:৪৮:৪১ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: আবজান বিবি (৭৫) সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের চিলাউড়া গ্রামের নিঃসন্তান বৃদ্ধা নারী। ২০০৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর স্বামীর রেখে যাওয়া বসতভিটায় আশ্রয় দেন একই গ্রামের স্বামীর দূর সম্পর্কের আত্মীয় মজমিল মিয়ার ছেলে অজুদ মিয়াকে। স্বামীর মৃত্যুর পর ভিক্ষা করে নিজের ও অজুদ মিয়ার পরিবারের আহার জোগাতে হয় তাকে। ২০১৮ সালে বৃদ্ধা আবজান বিবিকে মারধর করে তাঁরই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন অজুদ মিয়া।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিঃসন্তান ওই নারীর বাড়ি ঘর দখল করতে তাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার পর তিনি আশ্রয় নেন গ্রামের অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে। অজুূদ মিয়া বৃদ্ধ নারীকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়ি দখল করে ঘরের আসবাবপত্র ও বাড়ির গাছ কেটে বিক্রি করেন। এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হলেও কোন কাজ হয়নি। গত বৃহস্পতিবার তিনি জগন্নাথপুর থানায় এসে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমানকে বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পায়। গতকাল শনিবার দুপুরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আবজান বিবিকে তাঁর স্বামীর ঘরও বসতভিটা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
আবজান বিবি জানান, মৃত্যুর আগে স্বামীর রেখে যাওয়া মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতভিটা ফিরে পেয়ে আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, উপকার করতে গিয়ে অজুদ মিয়াকে আশ্রয় দিয়ে নিজেই আশ্রয়হীন হয়েছিলাম। চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সালিসি ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোন বিচার না পেয়ে হতাশায় ছিলাম। সর্বশেষ এক প্রতিবেশীর পরামর্শে থানায় গিয়ে ওসিকে সবকিছু বলার পর পুলিশের আন্তরিকতায় সবকিছু ফিরে পেলাম।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত অজুদ মিয়া বলেন, আমি বৃদ্ধ নারীর বাড়ি দখল করিনি। তিনি আমার আত্মীয়।সম্পর্কে দাদী হন।আমার দাদা মৃত্যুর আগে ওই বাড়িতে চার শতাংশ জায়গা দিয়ে গেছেন। একটি কুচক্রি মহল তাকে ভুল বুঝিয়ে আমার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চাইছে।
চিলাউড়া-হলিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বলেন, নিঃসন্তান বৃদ্ধ নারীর বিষয়ে আমরা একাধিকবার চেষ্টা করে কোন সুরাহা করতে পারিনি। জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজে এসে অজুদ মিয়াকে বুঝিয়ে বৃদ্ধ নারীর বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ওসি ওই নারীকে নিজের অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দেন।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, দুই দিন আগে অসহায় ওই বৃদ্ধ নারী আমার সঙ্গে থানায় এসে দেখা করে তাঁর স্বামীর বসতভিটা থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। আমি তাঁর নিকট থেকে বিস্তারিত সবকিছু শুনে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়ে তদন্ত শুরু করি। সত্যতা পাওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে অজুদ মিয়াকে বুঝিয়ে বলার পর তিনি বাড়ি ফিরিয়ে দিতে রাজি হন। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বৃদ্ধ নিঃসন্তান নারীকে তাঁর ভিটা বুঝিয়ে দেই। তিনি বলেন, কাজটি করতে পেরে আমি নিজেও তৃপ্ত।