বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ৪:১৬:১২ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার : আজ ২২ শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ ¯্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর এই বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্র ভক্তদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। রবীন্দ্র কাব্য-সাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন; সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এইদিন। মৃত্যুর দিন সাতেক আগে তৈরি হয়েছিল তাঁর শেষ লেখা-
‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ/ আকীর্ণ করি বিচিত্র ছলনাজালে/ হে ছলনাময়ী…’
‘মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান’, ভানুসিংহের পদাবলীতে মৃত্যুকে এভাবেই বন্দনা করে গিয়েছিলেন তিনি। ১২৬৮ সনের ২৫ শে বৈশাখ (ইংরেজিতে ১৮৬১ সালের ৭ মে) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদাসুন্দরী দেবী। প্রথাগত শিক্ষায় বিশ্বাস ছিল না তাঁর। বাড়িতেই গ্রহণ করেছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা। একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩টি, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর ৩৬ খ-ে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এছাড়াও ১৯ খ-ের রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র।’ ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তি নিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে সংরক্ষিত আছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন দার্শনিকও। মানুষের কল্যাণের জন্য যে সাধনা তাই ছিল তার ধর্ম। তার দর্শন ছিল মানুষের মুক্তির দর্শন। মানবতাবাদী এই কবি বিশ্বাস করতেন বিশ্বমানবতায়। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেই দর্শন অন্বেষণ করেছেন। তার কবিতা, গান, সাহিত্যের অন্যান্য শাখার লেখনী মানুষকে আজও সেই অন্বেষণের পথে, উপলব্ধির পথে আকর্ষণ করে। রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের মনমানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। বাঙালির যাপিত জীবনাচরণের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবনের এমন কোনো বিষয় নেই, যেখানে আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পাই না। তার রচনাবলী আমাদেরকে প্রেরণার শিখা হয়ে পথ দেখায়। বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন।
‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনিই একমাত্র কবি, যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা)। আশি বছরের জীবন সাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অজস্র অমরতার শাশ্বত বার্তায়। সত্যি বলতে বাঙালির চেতনার রঙ স্পষ্ট হয়েছে রবিঠাকুরের আলোয়। তাই তো তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। আজকে জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতার বাণী এবং তার মতাদর্শ জাতিকে দিকনির্দেশনা দিতে পারে। রবীন্দ্রচর্চা তরুণ সমাজকে করে তুলতে পারে আরও মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী।
দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশের মতো সিলেটেও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ নানা আয়োজনে রবিঠাকুরের ৮২তম প্রয়াণ দিবস পালন করবে। বিটিভিসহ বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ও বেতারেও সম্প্রচার করা হবে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবসের নানা অনুষ্ঠান। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ রচনা।