গ্রাম-শহরের পার্থক্য
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ৫:২৬:৩০ অপরাহ্ন
অত্যাচারির বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের অন্তরে যে বিদ্বেষাগ্নির জন্ম হয়, তা অত্যাচারিকে ভস্ম করেই ক্ষান্ত হয় না, সে আগুনের শিখায় অনেককিছুই দগ্ধীভূত হয়। – হযরত আলি রা.
আমার গ্রাম আমার শহর-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গ্রামে নাগরিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার অভিযাত্রা কতোটুকু এগিয়েছে? ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিলো এটি। বলা হয়েছিলো-শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ লক্ষে একাধিক প্রকল্পও নেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদের শেষ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে শহরের সব সুবিধা গ্রামে পৌঁছেনি। আর যেগুলো পৌঁছেছে তার সেবার মানও শহরের মতো ভালো নয়।
প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া হাজারো গ্রামের সমষ্টি বাংলাদেশ। সবুজ ছায়ায় ঘেরা আবহমান বাংলার গ্রামাঞ্চলেই বসবাস বেশিরভাগ জনগোষ্ঠির।আর মনুষের গড়া শহরে বাস করে জনগোষ্ঠির কম অংশ। পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের মোট আয়তন ১ লাখ ৪৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে গ্রামীণ এলাকা ১ লাখ ৩৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং শহুরে এলাকা ১৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার। শহরের আয়তনের চেয়ে গ্রামের আয়তন প্রায় ৯ গুণ বেশি। শহরের চেয়ে গ্রামে জনসংখ্যাও বেশি। দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে গ্রামে বাস করেন ১১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার ও শহরে ৫ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার। শতাংশের হিসাবে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করেন। এ হিসাবে দেশের সার্বিক উন্নয়নে গ্রামকেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। এভাবেই চলে আসছে অতীত থেকে। এই ধারার বিপরীতে বর্তমান সরকার ঘোষণা দেয় গ্রামে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার। কিন্তু তার অগ্রগতি আশানুরূপ নেই। আদতে গ্রাম-শহরের পার্থক্য যা ছিলো সেটাই আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় সব খাতেই গ্রাম ও শহরের বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষের সুযোগ-সুবিধা এখনও অনেক কম। যেমন-মানসম্মত চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের আয় কম অথচ মূল্যস্ফীতির হার বেশি, গ্রামে কর্মোপযোগি মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ কম, স্কুল থাকলেও শিক্ষক কম, সেতু নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক নেই, বিনিয়োগের প্রবাহ কম, সুপেয় পানির ব্যবস্থা হয়নি, ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই অচল। সব মিলিয়ে গ্রামের মানুষ এখনও ভালো নেই। তারা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে গ্রামে কখন পৌঁছুবে শহুরে আবহ, সেটা বলা মুশকিল।এক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, গ্রাম-শহরের মধ্যে চিরাচরিত যে বৈষম্য রয়েছে, সেটা দূর করা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শহরের মানুষের খাদ্যের জোগান আসে গ্রাম থেকে। খাদ্যের জোগানদাতা হিসাবে গ্রামের মানুষেরই বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, গ্রামেই খাদ্যপণ্যসহ সব ধরণের পণ্যের দাম বেশি। ফলে শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হারও বেশি।