ছোটদের রবীন্দ্রনাথ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ৫:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন
ইছমত হানিফা চৌধুরী
রবীন্দ্রনাথের কবিতা, নাটক, ছড়া, গল্পে শিশুরা এসেছে ঘুরেফিরে। তাঁর ‘তোতাকাহিনী’ সম্পূর্ণ শিশুশিক্ষা নিয়ে একটি ক্ষুদ্র গল্প। শিশুদের নিয়ে নানা আঙ্গিকের লেখা ছাড়াও শিশুদের জন্য গান, নৃত্যনাট্য ইত্যাদি লিখে গেছেন তিনি। শিশুদের নিয়ে লিখতে গিয়ে কবি নিজেও যেন শিশু বনে গেছেন। শিশুদের চাওয়া-পাওয়া, আধো-আধো কথা বলা তাঁর শিশুকাব্যে হয়েছে প্রাণবন্ত। কবির শিশুমন গলির পাশের ফেরিওয়ালাকে দেখে ফেরিওয়ালা, মালিকে দেখে মালি, পাহারাদারকে দেখে পাহারাদার আর ঘাটের মাঝি হতে চায়। এভাবেই শিশুর চাওয়া-পাওয়া, আধো আধো কথা তার কাব্যে আরো জীবন্ত হয়ে ওঠে। বৃষ্টিস্নাত মৌসুমে ছুটির ঘণ্টা বাজানোর ঢংয়ে তিনি লিখেছেন- ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে/ বাদল গেছে টুটি/ আজ আমাদের ছুটি ও ভাই/ আজ আমাদের ছুটি।’
শিশুকিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন ছন্দের ঢেউ তোলা মিষ্টি মিষ্টি ছড়া-কবিতা। লিখেছেন মজার মজার গল্প ও নাটিকা। তাঁর লেখা শিশুতোষ গানের সংখ্যাও অনেক। যা ছোটবড় সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। শিশুদেরকে রবীন্দ্রনাথ ভীষণ ভালোবাসতেন। ওদের জন্য কখনো তিনি সৃষ্টি করেছেন কল্পনার জগৎ। কখনো সাজিয়েছেন বাস্তবতার চিত্র। তাঁর লেখা ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘খাপছাড়া’, ‘শিশু’, ‘ছড়ার ছবি’ ইত্যাদি আমাদের শিশুসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। তাঁর লেখা ছোটগল্পে ফুটে উঠেছে এ দেশের অজপাড়া গাঁয়ের কিশোর-কিশোরীদের কথা।
‘ছুটি’ গল্পে ফটিকের মতো চির চঞ্চল চরিত্রকে তিনি চিত্রিত করেছেন। শিশুতোষ নাটক ‘ডাকঘর’-এ তিনি এঁকেছেন অসুস্থ বালক অমলের আকুতিকে। অমল চায় বাইরের পৃথিবীটাকে দু’চোখ ভরে দেখতে। কিন্তু কবিরাজের বারণ। তাকে সেড়ে তোলার জন্য সারাক্ষণ একটি ঘরে বন্দি রাখা হয়। সে পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। সবাইকে অনুনয় করে বলে তাকে মুক্ত করে দিতে। রাজ বাড়ির ঘণ্টা, দূরের আকাশ, গাঁয়ের পথ ওকে হাত বাড়িয়ে ডাকে।
প্রকৃতিদরদী এই কবি প্রকৃতির নানান বিষয়কে তুলে এনেছেন শিশুতোষ ছড়া-কবিতায়। রবীন্দ্রনাথ যখন ছোটদের জন্যে লিখেছেন তখন তিনি নিজেকে ছোট্ট শিশু ভেবেছেন। শিশুর কচি চোখের দৃষ্টিতে দেখেছেন আর লিখেছেন শিশুপাঠ্য ভাষাতেই। তাই কবি যখন ছোট নদীর কথা লিখলেন- ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।’
কবিতাটি পড়তে পড়তে শিশুরা নিজের চোখে দেখা নদীটির মিল খুঁজে পায়। কেউ কেউ ধরেই নেয় তাদের গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির কথাই লেখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন সচেতন খেয়ালি মনের মানুষ। বিচিত্র রকম সাধ বা ইচ্ছে ছিল তাঁর মনের মধ্যে। ছোটদের মতো তার মনটাও যখন যা দেখেছেন তাই করতে চেয়েছেন, তাই হতে চেয়েছেন।
ছোটদের নিয়ে যে কবিতা, গল্প, নাটক লিখেছেন তার ভেতর আছে গভীর কোনো তত্ত্ব। বিশেষ করে ‘শিশু’ ও ‘শিশু ভোলানাথ’ কাব্যে কবি শিশু মনের নানান রহস্য উন্মোচনে উদ্যোগী হয়েছেন। শিশুদের নিয়ে লেখা তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে আছে সহজপাঠ-১, সহজপাঠ-২, খাপছাড়া, ছড়া ও ছবি, গল্পস্বল্প, ছড়া, ছেলেবেলা, বিশ্বপরিচয়, লিপিকা, মুকুট প্রভৃতি। এ ছাড়াও সোনারতরী, কাহিনি, কড়ি ও কোমল, চিত্রা, ক্ষণিকা, কল্পনা, লেখন প্রভৃতি বড়দের বইয়েও শিশুকিশোর উপযোগী অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে।