জয় হোক বন্ধুত্বের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ২:৪০:১৮ অপরাহ্ন
দুষ্কর্মের প্রকৃত অনুতাপকারি এবং যে কখনও দুষ্কর্ম করে নাই ইহাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। -আল হাদিস
বিশ্ব বন্ধু দিবস উদযাপন করা হয় গতকাল। বন্ধুত্বের বাধন সুদৃঢ় করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। এর ইতিহাস পুরনো। ১৯৩৫ সালে দিবসটি পালন শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে। সে বছর মার্কিন কংগ্রেস ঘোষণা করে প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হবে। তখন থেকেই শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে বন্ধু দিবস পালন। আর তা খুব দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস এ রূপলাভ করে। পরবর্তীতে ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৩০ শে জুলাইকে বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে ভারত, বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশে আগস্ট মাসের প্রথম রোববারই বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
‘বন্ধু’ শব্দটি ছোট, কিন্তু এর গভীরতা অনেক। বন্ধুত্বের ব্যাপ্তি সীমাহীন। তবে এও ঠিক, বন্ধুত্বের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিনক্ষণ লাগে না। বন্ধুত্বের কোনো বয়সসীমা নেই। সমবয়সীরাও যেমন বন্ধু হতে পারে, তেমনি বয়সে ছোট-বড়রাও বন্ধু হতে পারে। মনের মিল হলেই বন্ধু হওয়া যায়। বন্ধুত্ব একটি পবিত্র, অমলিন সম্পর্কের নাম। মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন রক্তের সম্পর্কের বাইরে একটি সম্পর্ক হচ্ছে বন্ধুত্ব। অনেক সময় বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্তের সম্পর্কের গভীরতাকে ছাড়িয়ে যায়। বন্ধু হয় কারণে-অকারণে, মান-অভিমানে। পৃথিবীর নিষ্পাপ সম্পর্কের নাম বন্ধুত্ব। সৃষ্টির আদিতে বন্ধুত্ব ছিলো, এখনও আছে, থাকবে অনন্তকাল। বন্ধু শব্দের সঙ্গে যেন মিশে আছে নির্ভরতা ও বিশ্বাস। শক্ত বন্ধনের ভিত্তি হচ্ছে বন্ধুত্ব। বন্ধু আর বন্ধন একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, এক জীবনে একজন মানুষের সঙ্গে গড়ে ৩৯৬ জনের বন্ধুত্ব হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রতি ১২ জনে একজন টিকে থাকে। বন্ধুরা কাছাকাছি থাকলে মানুষের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং তা রোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। শিশুরা হাঁটা ও কথা বলা শেখার আগেই বন্ধুত্বের অনুভূতি টের পেতে পারে। অপর একটি গবেষণায় বন্ধুদের মাঝে ‘জিনগত মিল’ পাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। গবেষণায় আত্মীয়দের বাইরে তাদের বন্ধুবান্ধব ও অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে জিনগত বৈশিষ্ট্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণও করা হয়। একই সামাজিক পরিম-লের মানুষের জিনে প্রায় এক শতাংশ মিল পাওয়া যায়। আর অনাত্মীয় বন্ধুদের মধ্যে জিনগত মিল অনেকটা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সঙ্গে বিদ্যমান মিলের মতো। সর্বোপরি ‘বন্ধুত্ব’ ব্যাপারটা সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন। বন্ধুত্ব যে কোন সম্পর্ককে সহজ করে। বলেকয়ে বন্ধুত্ব হয় না। মনের সঙ্গে মনের মিল হলেই শুধু সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বে অহংকার ও হিংসার স্থান নেই। ‘বন্ধুত্ব’ এমন একটা বিষয়, যা অনেক ক্ষেত্রে জীবনের চেয়েও দামি হয়ে দাঁড়ায়। এমন নজির পৃথিবীতে বহু আছে। বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যাতে এক বন্ধু বিপদে পড়লে আরেক বন্ধু না জেনেবুঝেও আগুনে ঝাঁপ দিতে পারে।
আসল কথা হলো, প্রতিটি মানুষের জীবনে একজন ভালো বন্ধুই হতে পারে আশীর্বাদ। তবে আত্মার সঙ্গে আত্মার মিল না হলে বন্ধুত্ব হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে আজকাল এমন বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি নেই। এ সময়ে সত্যিকারের বন্ধু পাওয়া বা থাকা দুটোই ভাগ্যের ব্যাপার। কোনো কিছু পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি কাছে রাখার গুণটাও জরুরি। মনে রাখতে হবে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিচর্যার কোনো বিকল্প নেই। দিনে দিনে মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের চিরন্তন তাৎপর্য লোপ পাচ্ছে। আজকের এই বন্ধু দিবসে জয় হোক বন্ধুত্বের। পৃথিবীর সব মানুষের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।