সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১:৩৪:০১ অপরাহ্ন
ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজপুরুষের অত্যাচার ও বিচারাসনে বসিয়া বিচারকের অবিচারের মতো মন্দ কর্ম আর নেই। -হযরত আলি রা.
একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এটি সফল হলে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হবে। উদ্যোগটি হচ্ছে ‘বীরের কন্ঠে বীরগাথা’। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠে তাঁদের যুদ্ধকালীন স্মুতিচারণ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কন্ঠে ধারণকৃত যুদ্ধদিনের কথামালা সংরক্ষণে একটি সমৃদ্ধ আর্কাইভ গড়ে তোলা হবে। এতে ওঠে আসবে রণাঙ্গনে তাঁরা কীভাবে যুদ্ধে গেলেন, রণাঙ্গনে কী করেছেন, শত্রুর ঘাতক বুলেট, স্বজনবিহীন অনিশ্চিত জীবন আর সহযোদ্ধাদের কথা।
দেরিতে হলেও এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়; বলা যায় যুগান্তকারি। মুক্তিযুদ্ধ বারবার হবে না। যারা যুদ্ধ করেছেন তাঁরা বীর, তাঁরা সৌভাগ্যবান। তাঁরা অমর। তাঁদের নাম ইতিহাসে চিরকাল লিখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। এই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যেকোন ইতিবাচক উদ্যোগই জাতিকে পুলকিত করে। ‘বীরের কন্ঠে বীরগাথা’- প্রকল্পটিও সেইরকম একটি। তবে এখানে একটি বিষয়কে অস্বীকার করা যায় না। সেটা হলো, স্বাধীনতার এতোদিন পরে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশ কমেই এসেছে। যে কারণে এই ডকুমেন্টারির বাইরে থেকে যাচ্ছেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা। আরেকটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হলো, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা তৈরি হয় নি। এতোদিন সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও তৈরি হয়েছে। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি বিরাজ করছে মানুষের মধ্যে। তবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্য হচ্ছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখের বেশি হবে না। এখন পর্যন্ত যারা ভাতা পাচ্ছেন তাদের সংখ্যা এক লাখ ৮৭ হাজার। জানা গেছে, এপর্যন্ত ছয়বার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার বয়স, সংজ্ঞা ও মানদন্ড পাল্টেছে ১১ বার। আর তালিকাভূক্ত মুক্তিযোদ্ধার অনেকেই বেঁচে নেই। তারপরেও যাঁরা জীবিত আছেন তাঁদের নিয়ে উল্লিখিত ডকুমেন্টারি তৈরি হলে, সেটিও একটি ইতিহাস হবে। প্রত্যেকের নিজের কন্ঠে বর্ণনা ১৫ থেকে ২০ মিনিটে ধারণ করা হবে। পরে সেটা আর্কাইভে রাখা হবে। সরকার আশা করছে যতোদিন এই পৃথিবী থাকবে, ততোদিন যেন সংরক্ষিত থাকে মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এ সজীব ভাষ্য। প্রায় একশ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাও চিহ্নিত হবে।
স্মরণ করা যেতে পারে, বছর কয়েক আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ধরণের একটি উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এতে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যের বাইরে তাদের তেমন কোন তৎপরতা চোখে পড়ে নি। সরকারে চলমান প্রকল্প যাতে মুখ থুবড়ে না পড়ে, সেটাই আসল কথা। পাশাপাশি যাঁরা মারা গেছেন এবং শহীদ হয়েছেন, তাঁদের যুদ্ধকথাও কোনভাবে ডকুমেন্টারিতে সংযোজিত করা দরকার।