গুলশান গ্রেনেড হামলা দিবসে আলোচনা সভা
সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৫:২৫ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : ২০০৪ সালের ৭ আগস্ট গুলশান সেন্টারে মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা এবং ঐ হামলায় নিহত মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইব্রাহিম আলী স্মরণে এক আলোচনা সভা গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তালতলাস্থ গুলশান হোটেলের ৩য় তলার হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে এবং গুলশান সেন্টারে গ্রেনেড হামলায় আহত বিজয়ী যোদ্ধা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, আগস্ট আসলেই বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার গোষ্ঠী বারবার সক্রিয় হয়ে উঠে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে সপরিবারে হত্যা করার পরে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া, আহসানুল্লাহ মাস্টার, আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদেরকে হত্যা করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা, ৭ আগস্ট গুলশান গ্রেনেড হামলা সহ বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ২০০১ সালে এসে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন করার জন্য নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন করে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য ১৯ বার চেষ্টা করে। নেতা-কর্মীদের ওপর গ্রেনেড হামলা করে। এখনো তারা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু গ্রেনেড মেরে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক আগামীতেও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট নাসির উদ্দীন খান। তিনি বলেন, ৭ আগস্টের গুলশান গ্রেনেড হামলা ছিল খুবই ন্যক্কারজনক হামলা। এই হামলায় মিসবাহ ভাই, মফুর ভাই, জাকির ভাই, শওকত ভাই, এনাম ভাই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। ইব্রাহিম ভাই নিহত হয়েছিলেন। তাছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও আহত হয়েছিলেন। তৎকালীন সময়ে ইব্রাহিম ভাইয়ের লাশ নিয়ে আমাদেরকে মিছিল করতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এরকম একটি পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু রাজনীতি থেকে আমরা সরে যাইনি। তারেক জিয়া ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ আগস্ট হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। বিএনপি-জামায়াত এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্রের জবাব রাজপথেই দেওয়া হবে।
সভার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, শোকের মাস আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-কে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। আগস্ট আসলেই ঐ বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার গোষ্ঠী বারবার আঘাত আনার চেষ্টা করে। তারা সক্রিয় হয়ে উঠে।
আলোচনা সভা পরিচালনার পাশাপাশি স্মৃতিচারণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, তৎকালীন সময়ে আমি সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। ঐ দিন আমরা গুলশানে মিটিং শেষে বের হয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি আলোর ঝলকানি। চতুরদিকে ছুটাছুটি করছে সবাই। মফুর ভাই, শওকত ভাই, এনাম ভাই মাটিতে পড়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অপারেশন করা হয়। কিছুটা সুস্থ হলে ঢাকা থেকে তৎকালীন ডিবি পুলিশের আতিক মুন্সী এসে আমাকে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য বলেন। তিনি বলেন, ইব্রাহিম ভাই নাকি গুলশানে গ্রেনেড মেরেছেন এই সাক্ষী দিতে। তাহলে মামলা দেবে না।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, আগস্ট আসলেই বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে। ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা এবং হামলায় ২৪ জন নিহত হওয়া, ১৭ আগস্ট সারাদেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা, ২৪ আগস্ট নারী নেত্রী আইভি রহমানকে নিহত করা, ৭ আগস্ট গুলশান গ্রেনেড হামলা। সবই আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র। গুলশান গ্রেনেড হামলায় আমি নিজেও আহত হয়েছিলাম। সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায়। ইব্রাহিম সেইদিন নিহত হয়েছিলেন। শুধু এই গ্রেনেড হামলা নয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের ওপর বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী সারাদেশব্যাপী গ্রেনেড হামলা অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে রাখতে পারিনি।
এছাড়াও আলোচনা সভায় স্মৃতিচারণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবীর উদ্দিন আহমদ, সম্মানিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট রাজ উদ্দিন, কার্যনির্বাহী সদস্য আজম খান, জামাল আহমদ চৌধুরী, সাবেক সদস্য মো: আব্দুস সোবহান। বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, দপ্তর সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরান, উপদেষ্টা আব্দুল মালিক সুজন, কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট মোহাম্মদ জাহিদ সারোয়ার সবুজ, ২৭ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছয়েফ খাঁন।