দিরাই পৌর শহরে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০২৩, ৩:১৪:১০ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভা গঠিত হওয়ার দুই যুগ পার হলেও কাক্সিক্ষত নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। সংস্কারের অভাবে দিরাই পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তার বেহালদশা। ফলে প্রতিদিনই কোন না কোন সড়কে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়। রাস্তার বেহালদশার কারণে ওইসব রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লোকজন ও যানবাহন চালকেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এ ব্যাপারে দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় জানালেন, শীঘ্রই রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে দিরাই পৌরসভা গঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে যাওয়া রাস্তার কোন মেরামত হয়নি। পিচঢালা আর ইটের খোয়া উঠে দিরাই পৌরসভার বেশ কয়েকটি রাস্তা চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাগুলোর এই করুণ দশা হয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এ অবস্থায় সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তারা।
গতকাল দিনভর পৌর এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা পয়েন্ট, মধ্যবাজার , হাইস্কুল রোড, চন্ডিপুর রোড, বাজারের আখড়া মন্দির থেকে রাধানগর রাজাপুর রোড, ডিগ্রি কলেজ রোড, ,মাদানি মহল্লা, ভরারগাঁও রোডসহ পাড়া মহল্লার প্রায় প্রতিটি কাচা পাকা রাস্তা বেহাল দশা । পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার রাস্তার পিচ উঠে যানবাহন চলাচলের অনুপোযাগী পড়েছে।
দিরাইবাজার ব্যবসায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক ধনীর রঞ্জন রায় বলেন, এলাকাবাসীকে আধুনিক সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ২৪ বছর আগে পৌরসভা গঠন করা হয়। কিন্তু আধুনিক সেবার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পৌরবাসী।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী বাহলুল চৌধুরী বলেন,কয়েকটি রাস্তার অবস্থা এতই শোচনীয় যে গাড়ি নিয়ে চলাচল করা কঠিন। রিকশা কিংবা ইজি বাইকে উঠলে ঝাঁকুনি খেতে খেতে শরীরে ব্যথা হয়ে যায়। আমার বাড়ি রাজাপুর থেকে বাজারের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় প্রতিদিন হেঁটেই বাজারে যাতায়াত করি।
সেন মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বাগবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, শুধু উন্নয়নের বুলি শোনা যায়, বাস্তবে তা পরিলক্ষিত হয় না। আমাদের ওয়ার্ড এলাকায় উপজেলা অফিস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো এখনো মেরামত হয়নি। রিক্সা চালক ছাদিকুর রহমান বলেন, দিরাই থানা পয়েন্ট থেকে ব্রাক অফিস হয়ে আনোয়ারপুরের রাস্তা মেরামতের জন্য দুই বছর আগে ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ শুরু হওয়ার পর অদৃশ্য কারণে কাজ বন্ধ থাকায় এ রাস্তায় রিক্সা নিয়ে যাওয়া যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মচারী বলেন, আনোয়ারপুর রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ আছে বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা । এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটছে।
পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ভরারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নুর আলম বলেন, দীর্ঘ ২৪ বছরেও আমাদের এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন হয়নি, এখনও আমাদের কাদামাখা কাঁচা রাস্তা দিয়েই চলাচল করতে হয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক মাহবুব মিয়া বলেন, রাস্তা ভাঙা থাকার কারণে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে।
এ বিষয়ে দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বাজারের অসচেতন ব্যবসায়ীগণকে দায়ী করে বলেন, ময়লা ফেলার কারণে ড্রেনগুলোর পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি আটকে যায়।অচিরেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল রাস্তাঘাট মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।