বাইতুল্লাহর সফর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২৩, ২:৫০:৩২ অপরাহ্ন
কবীর আহমদ
অবশেষে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূর্ণ হলো। অতি নাটকীয়তায়। ২৫ নভেম্বর, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ শুক্রবার জুমার আযানের পর অপ্রত্যাশিতভাবে আমার অর্ধাঙ্গীনি প্রয়াত হন। প্রথমা কন্যা রেখা, তৃতীয়া কন্যা মিতা এবং একমাত্র পুত্র মিঠু ইংল্যান্ড প্রবাসী। তাদের অপেক্ষায় রইলাম পরদিন শনিবার পর্যন্ত। শনিবার বিকেল ৩টায় তারা দেশে আসার পর বাদ এশা মানিকপীর মাজার সংলগ্ন গোরস্তানে প্রয়াতের সমাহিত করা হল। ১১ ডিসেম্বর প্রবাসীরা তাদের গন্তব্যে চলে গেল।
সিলেট শহরের বাসায় রইলাম আমি, চতুর্থ কন্যা রীতা, তার দুই পুত্র রেদওয়ান, রিফাত আর তাদের পিতা হেলাল। সর্বকনিষ্ঠা কন্যা রিপা, জামাতা আফজল, নাতি আরাফ। রইল দ্বিতীয়া কন্যা মনি, তার জ্যেষ্ঠ্য পুত্র মুশাহিদ ও তার স্ত্রী তাম্মী, একমাত্র নাতœী মিম এবং তাদের পিতা কমরু। ওরা সব কুলাউড়া গ্রামের বাড়িতে থাকে। দ্বিতীয়া কন্যার কনিষ্ঠ পুত্র মুজাহিদ ও তার স্ত্রী ইংল্যান্ড প্রবাসী।
আমার পারিবারিক অবস্থান যখন এই, তখন একদিন তৃতীয়া কন্যা মিতা এবং জামাতা মারুফ আমাকে ওমরাহ্ হজের জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি বললাম, ইচ্ছা আছে, সম্বল নাই। তারা বলল ইচ্ছা করুন, সম্বল হবে। তারা দুজন পরামর্শ করে ওমরাহ হজের সাকুল্য অর্থ চতুর্থ জামাতা হেলালের মাধ্যমে মুয়াল্লিম মোহন মিয়ার জিম্মায় আমার সৌদি ভিসার ব্যবস্থা করেন।
১৪ মার্চ, ২০২৩ মঙ্গলবার সাড়ে নয়টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছলাম। মুয়াল্লিম মোহন মিয়া আমাদেরকে প্রথা অনুযায়ী এহরাম পরালেন। পাসপোর্ট, ভিসা, টিকিট নিয়ে কাস্টম কাউন্টারে বোর্ডিং কার্ড আনতে গেলাম। বোর্ডিং কার্ড নিয়ে লাউঞ্জে প্রবেশ করে অপেক্ষমান রইলাম। সৌদী এয়ার লাইন্সের ফ্লাইট নং এসডি ১৪৫৮ বিমানবন্দরে অবতরণ করল। ১নং টার্মিনাল দিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় বিমানে প্রবেশ করলাম। পাঁচ ঘন্টার অধিক চলার পর আমাদেরকে এয়ার ক্রাফট বোয়িং ৭৭৭-৩০০ জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১নং টার্মিনালে অবতরণ করলো। জেদ্দা হতে মোহন মিয়ার নেতৃত্বে মক্কা পৌছলাম। মক্কাস্থ বাংলাদেশ হোটেলে অবস্থান গ্রহণ করলাম। হোটেল থেকে হেরেম শরীফে ধীরগতিতে ১০ মিনিট পায়ে হেঁটে যাওয়া যায়। ইব্রাহিম আল খালিদ স্ট্রীটের কবুতর চত্বরের পাশেই বাংলাদেশ হোটেল । তাই যখন ইচ্ছা হেরেম শরীফে যাওয়া সহজ ব্যাপার ছিল। নতুন কোনো স্থানে যাতায়াত আমার পক্ষে সমস্যা। তাই হোটেল থেকে একা বের হতে সাহস পেতাম না। হোটেলের একই কক্ষে আমরা চারজন ঘুমাতাম। মুয়াল্লিম মোহন মিয়া, মুন্সীগঞ্জ জেলার ক্বারী মামুন এবং পাবনা জেলার বদিউর রহমান ও আমি। আমরা চারজনই একসাথে ছিলাম। একসাথে থাকার সুবাদে ক্বারী মামুন ও বদিউর রহমানের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। নামাজ, তাওয়াফ, ছায়ীতে এরা দুজনই আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন। আমাদের পনেরজনের দলে আমিই জ্যেষ্ঠতম। তাই মুয়াল্লিমসহ সবাই আমার প্রতি অতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তওয়াফ করার সময় মুয়াল্লিম সাহেব আমার হাত ধরে জনতার ভীড়ে টেনে নিয়ে যেতেন। একইভাবে সাফা মারওয়ায় যেতাম।
১৫ মার্চ প্রথম ওমরাহ শুরু করি। ঐ দিন হেরেম শরীফে ফজরের নামাজের পর সাতবার ঘুরে তওয়াফ এবং পরে সাফা মারওয়ায় সাঈ করি। ১৬ইং মার্চ বৃহস্পতিবার। আয়েশা মসজিদ থেকে এহরাম এবং তওয়াফ। ১৭ মার্চ শুক্রবার জুমার নামাযের প্রস্তুতি। ক্বারী মামুন ও বদিউর রহমান হেরেম শরীফে নিয়ে গেলেন জুম্মার নামাজ আদায় করতে। নামাজের জন্য স্থান খুঁজতে খুঁজতে ক্রমশ ৫ম তলায় অবস্থান নিলাম। নামাজ শেষে কোরআন তেলাওয়াত করে একাগ্র মনে অতি ঘনিষ্ঠজনসহ মৃত ও জীবিত সকলের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাই। ১৮ মার্চ শনিবার আয়েশা মসজিদ থেকে এহরাম বেঁধে তওয়াফ। ১৯ মার্চ রবিবার জাবালে নূর, আরাফাহ ময়দান, মুজদালেফা, মীনা, জাবালে নূর, জান্নাতুল মুয়াল্লা এবং জান্নাতুল বাকী সফর শেষে অপরাহ্ন দুইটায় মক্কা থেকে তায়েফ রওয়ানা হই। তায়েফ মক্কা থেকে ১২০ মাইল দূরে এবং সমতল ভূমি থেকে পাঁচ হাজার ফুট উঁচুতে। পাহাড়ী আকাবাকা চারলেনের রাস্তা আড়াই ঘন্টা বাসে চলার পর তায়েফ পৌছলাম। তায়েফ যাওয়ার পথে এবং তায়েফে পৌছে যা দেখলাম তা হলো প্রথম আকর্ষণ সৌদী আরবের পাহাড় সমূহ। পাহাড় বলতে আমি যা বুঝি তা হলো সমতল থেকে সুউচ্চ ভূমি, যেখানে গাছপালা, গুল্মলতা পাতা পরিবেষ্টিত জঙ্গল। আমার সকল ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো এই দেখে যে, এখানকার পাহাড়গুলো সুউচ্চ ও পাথরময়। বাংলাদেশের মত মাটির পাহাড় নয়, পাথরের। বৃক্ষরাজি বনজঙ্গল কিছুই নাই। প্রিয় নবী (সা:) পাথরের সুউচ্চ পাহাড়ে হেরা গুহায় ধ্যানরত থেকে প্রথম ওহী প্রাপ্ত হন। এসব পাথরের পাহাড় হেঁটে আড়াইশ মাইল দূরে মদীনায় হিজরত করেন। পথে পাহাড়ের গুহায় কুরাইশদের দৃষ্টির অন্তরালে বিশ্রাম নেন। গুহার মুখে কবুতর বাসা বেঁধে বসে থাকে। মাকড়সা জাল বুনে বসে থাকে। কুরাইশরা তাই গুহায় খুঁজে দেখার প্রয়োজন মনে করে নি। এভাবেই মহান আল্লাহ তার প্রিয় রাসুল (সা:) কে মাহাত্ম্যের চাদরে ঢেকে মদীনায় পৌছিয়ে দিলেন।
তায়েফ যাওয়ার পথে রাসুল (সা:) এর চাচা হযরত আব্বাস (রা:) মসজিদে থামি। আমাদের মুয়াল্লিম হাজী মোহন মিয়া একজন জ্ঞানী ব্যক্তি। তার নেতৃত্বে আমরা ভ্রমণ করেছিলাম। তিনি জানালেন, হযরত আব্বাস (রা:) কে বলা হতো রইসুল মুফাসসিরিন। অতঃপর আব্বাস মসজিদে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলাম। এখান থেকে বের হয়ে পায়ে চলা সংকীর্ণ পথে যয়তুন বাগান ঘুরে এলাম। পবিত্র কোরআনে সূরা আত-তীনে মহান আল্লাহ তীনে ও যয়তুনের শপথ, সিনাই পর্বত এবং নিরাপদ মক্কা নগরীর শপথ নিয়ে মানুষকে শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি করার নিশ্চয়তা দান করেছেন। যয়তুন বাগান থেকে বের হয়ে মসজিদে আলী (রা:) তে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করি। এখান থেকে সামনে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জমিলার বাড়ী। বাড়ী তো নয়, সেই যুগের মানুষেরা বিশেষত ইহুদীরা পাহাড় পর্বতের গুহায় বাড়ী বেধে বাস করত। উম্মে জমিলার বাড়ী ছিল পাথরের পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা একটি গুহা। রাসূল (সা:) যে পথ দিয়ে যেতেন, সেই পথে উম্মে জামিলা কাটা ফেলে বাধার সৃষ্টি করে রাখতো। তাই সুরা লাহাবে আবু লাহাব ও তার স্ত্রী উম্মে জমিলাকে অভিসম্পাত দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘ধ্বংস হউক আবু লাহাবের দুই হাত। ধ্বংস হউক সে নিজে। তার পৈত্রিক সম্পত্তি ও ধ্বংস হোক এবং যা কিছু সে অর্জন করেছে, এসব কিছুই কাজে আসবে না। সত্তরই সে শিখাযুক্ত অগ্নিতে প্রবেশ করবে। তৎসঙ্গে তার স্ত্রী সেই কাষ্ঠ বহনকারিনী। তার গলায় থাকবে খেজুরের রশি।’ উল্লেখ্য, আবু লাহাব হযরত (সা:) এর চাচা, তার নাম আব্দুল ওজ্জা। আব্দুল ওজ্জা ছিল অতি সুন্দর। এ কারণে তার ডাক নাম ছিল আবু লাহাব।
রসুল (সা:) এর উপর যখন তার আত্মীয়স্বজনকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হল, তিনি তখন তার আত্মীয়স্বজনকে সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে সতর্কবাণী শোনান। এতে আবু লাহাব উত্তেজিত হয়ে হাত নেড়ে গালি দিয়ে বলেছিল ‘তোর হাতসহ তুই ধ্বংস হ’। অপরদিকে আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলা জঙ্গল থেকে কাঁটা এনে হযরত (সা:) এর চলার পথে বিছিয়ে রাখত। বদরের যুদ্ধের অল্প পরেই আবু লাহাবের মৃত্যু হয়। উম্মে জমিলা কাঠের বোঝা নিয়ে বাড়ীর ফেরার পথে বোঝার রশি পিছলে গলায় ফাঁস লেগে মারা যায়। উম্মে জমিলার বাড়ির অনতিদূরে মসজিদে রসুলুল্লাহ যেখানে প্রিয় নবী (সা:) নামাজ আদায় করতেন। তার একটু দূরে মিকাত মসজিদ। ১৯ মার্চ সাড়ে ৪টায় জাবালে নুর ত্যাগ করে ৪টা ৪৫ মিনিটে আরাফাহ ময়দানে পৌছি। বিকাল ৫টা ৩৯ মিনিটে মীনা ময়দানে পৌঁছলাম। সমগ্র মীনা এবং আরাফাহ জুড়ে বাংলাদেশের নিমগাছ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে সৌদী আরবে অসংখ্য নিমগাছের চারা উপহার দিয়েছিলেন। ঐ নিমগাছগুলো এখনও স্মৃতি হয়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মীনা ও মুযদালিফার মধ্যবর্তীতে আবরাহা বাদশার ওয়াদিউমার ধ্বংসস্থল ‘ওয়াদিয়ে মুহাসার’ অবস্থিত। পবিত্র কোরআনে সুরা ফীলে বর্ণিত হস্তি অধিপতির করুণ পরিণতির কথা বর্ণিত আছে। উল্লেখ্য, ইয়ামেনের খৃস্টান শাসক আবরাহা কাবাঘরকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে ষাট হাজার সৈন্যের বাহিনী এবং তেরটি যুদ্ধের হাতি নিয়ে মক্কার নিকটে আসে। আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন কাবার মোতাওয়াল্লী। তিনি কাবা ও ইহার খাদেমগণকে রক্ষার জন্য দোয়া করেন। আল্লাহর গায়েবী সাহায্য আসলো। ঝাঁকে ঝাঁকে আবাবিল পাখি পায়ে ও ঠোটে কঙ্কর নিয়ে হস্তি বাহিনীর উপর ফেলতে লাগলো। ফলে বাহিনীর সকল হাতি ও সৈনিক চর্বিত ঘাসের ন্যায় ধ্বংস হয়ে গেল। সেই ধ্বংসস্থল ‘ওয়াদিউলার’।
মীনা থেকে বের হয়ে প্রায় আধঘন্টা পর হেরা পর্বত পৌছলাম। জাবালে নূরে অবস্থান করলাম। জান্নাতুল মুয়াল্লা এবং তৎসংলগ্ন খেজুর বাগান ছিল দৃষ্টিনন্দন। সন্ধ্যা ছয়টায় হোটেলে ফিরলাম। এভাবে ২০ মার্চ, ২১ মার্চ ও ২২ মার্চ মক্কাস্থ বাংলাদেশ হোটেলে অবস্থান ও হেরেম শরীফ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলাম। ২২ মার্চ বুধবার বিকাল সোয়া তিনটায় বাসযোগে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বিশাল বড় বাসগাড়ী, ড্রাইভার ইরানের নাগরিক। বাস গাড়ীর ভিতরের টয়লেট আছে। মক্কা থেকে মদীনার দূরত্ব ৪৭৫ কি.মি। পথিমধ্যে ২৩৫ কি.মি. ওয়াদি সিতারায় আসরের নামাজ পাহাড় আদায় করি। সমগ্র রাস্তা পাহাড়ী এলাকা। রাস্তার উভয় পার্শ্বের পাহাড় চিত্তাকর্ষক। এখানে ইন্দোনেশিয়া রেষ্টুরেন্ট থেকে কিছু খাবার খেলাম। বাংলাদেশী এক শ্রমিকের সাথে পরিচয়। বয়স কম। বাড়ি ফেনী জেলায়। রাতে সোয়া তিনটায় মদীনায় পৌছলাম। মদীনার মসজিদে নববীর পার্শ্বে ইয়াছমিন আল মদীনা হোটেলে অবস্থান গ্রহণ করি। এশার নামাজের জন্য মসজিদে যেতে পারিনি। ক্লান্ত ছিলাম। ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার ১লা রমজান। মসজিদে নববীতে ফজর নামাজ আদায় করি। মদীনায় রসুলুল্লাহ (সা:), হযরত আবু বকর (রা:) এবং হযরত ওমর (রা:) মাজার অবস্থিত। জান্নাতুল বাকী এবং রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করি । ২৪ মার্চ শুক্রবার। মসজিদে নববীতে জুম্মার নামাজ আদায় করি। রিয়াজুল জান্নাতে দ্বিতীয়বার গেলাম। মাগরিবের নামাজ মসজিদে নববীতে আদায় করি। মসজিদেই স্বেচ্ছাসেবীগণ ইফতারি দিলেন। রুটি, দই, আপেল, বিরিয়ানী আর পানি ছিল ইফতারীর সামগ্রী। ২৫ মার্চ শনিবার ৩রা রমজান হোটেল কক্ষে ইফতার সেরে হোটেলের নিকটে এক ছোট মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। নামাজ শেষে এক অল্প বয়স্ক আলিম আমাদেরকে দেখে জানতে চান আমরা বাংলাদেশী কিনা। জবাবে হ্যাঁ বলায় তিনি নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি ঐ মসজিদের ইমাম। বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলায় বাড়ি। বিশ বছর হয় সৌদীতে মসজিদের ইমামতি করছেন। চেহারায় অল্প বয়স্ক হলেও প্রকৃত বয়স ইমামতির যোগ্যতাসম্পন্ন। তিনি অতি ঘনিষ্ট হলে আগামী দিন ইফতারির দাওয়াত করলেন। আমরা সাধ্যমত ইফতার সামগ্রী নিয়ে মসজিদে গেলাম। ইমাম সাহেব আমাদের জন্য পুরা বাংলাদেশী ইফতার সামগ্রী তথা মুড়ি, চানা-ভোনা, পিয়াজু এবং ফলমূলসহ দই দিয়ে ইফতার করালেন। নামাজ শেষে অনেকক্ষণ খোলামেলা আলাপ করে বিদায় নিলাম। ২৬ মার্চ রবিবার ৪ঠা রমজানের ইফতার এভাবে সারলাম। এদিন দিনের বেলা ওহুদ পাহাড় দেখতে গেলাম। রসুলুল্লাহর সময়ে ওখানে ওহুদের যুদ্ধ হয়েছিল। হযরত আমীর হামযার মাজার, মসজিদে ক্বেবলাতাঈন, মসজিদে কোবা এবং বেলাল মসজিদ মদীনাতে অবস্থিত। এমন স্থান দেখতে পেরে নিজের জীবন ধন্য মনে করলাম এবং মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলাম। ২৬ মার্চ এসব সফর শেষ করলাম। রাতে একাগ্র চিত্তে পবিত্র কালামে পাক তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর দরবারে দুহাত তুলে দীর্ঘ মোনাজাত করলাম। এটা ছিল শেষ বিদায়ী দোয়া।
২৭ মার্চ তথা ৫ রমজান মদীনায় প্রিন্স মোহাম্মদ বিন আব্দুল আজিজ বিমানবন্দর থেকে সৌদী আরাবিয়ান বিমান এসডি ১৪৫৮ নং ফ্লাইটে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে রওয়ানা দিয়ে ১০টা ৫০ মিনিটে রিয়াদের কিং খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে ঢাকার বিমানের জন্য অপেক্ষা করলাম। ২৭ মার্চ সৌদী আরাবিয়ান বিমানের ফ্লাইট নং এসডি ৮০৪ বিমানবন্দরে পৌছে অপরাহ্ন ২.৩০ মিনিটে বিমানে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। ঐদিন ছিল ৫ রমজান, রাত ১১টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছলাম। আমার চতুর্থ জামাত হেলাল এখানে গাড়ী নিয়ে অপেক্ষমান ছিল। বিমানবন্দরের লাউঞ্জে থেকে হুইল চেয়ারে করে গাড়ীতে উঠলাম। রাত তিনটায় ভৈরবের জান্নাত হোটেলে সেহরী খেলাম। উল্লেখ্য, ৫ রমজানের ইফতার চলন্ত বিমানে আকাশ পথেই করা হয়েছিল। ৬ রমজানের সেহরী জান্নাত হোটেলে খেয়ে পুনরায় যাত্রা করে ভোর সাড়ে পাঁচটায় শমসের নগরের আলীনগর চা-বাগানস্থ চতুর্থ জামাতার পিত্রালয়ে বিশ্রাম নিলাম। পরদিন সকাল ১১টায় সড়ক পথে রওয়ানা দিয়ে অপরাহ্ন ২ টায় সিলেটে নিজ বাসায় পৌছলাম। আমার ওমরার সফর যাদের কারণে আমি ধন্য হয়েছে, মহান আল্লাহ তাদেরকে উত্তম বদলা দান করুন, আমীন।