বিশ্বনাথে ৬ জন অগ্নিদগ্ধ মামলার রায়
আরশ আলীর মৃত্যুদন্ড রেহানার যাবজ্জীবন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০২৩, ৫:২১:৫১ অপরাহ্ন

এমদাদুর রহমান মিলাদ, বিশ্বনাথ থেকে ঃ পরকীয়ার জেরে বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের রহিমপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামে অগ্নিসংযোগে ৬ জন দগ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী আরশ আলীকে (৪২) মৃত্যুদ- ও রেহেনা বেগমকে (৩০) যাবৎজীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক সায়লা শারমিন এই রায় প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী রাজু ভৌমিক। আরশ আলী ও রেহানা বেগম তাদের অবৈধ পরকীয়া সম্পর্কের পথে বাধা সরাতে ফারুক মিয়ার ঘরে আগুন দেয়। আরশ আলী রহিমপুর (পূর্বপাড়া) গ্রামের মৃত হুসন আলীর পুত্র এবং রেহেনা বেগম একই গ্রামের ফরিদ মিয়ার স্ত্রী।
২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট দিবাগত রাতে নিজ বসত ঘরে আগুনে দগ্ধ হন রহিমপুর পূর্বপাড়া গ্রামের ফারুক মিয়া (৫০), তার স্ত্রী চম্পা বেগম (৪৫), মেয়ে রিফা বেগম (১৮), ছেলে এমাদ উদ্দিন (১৪), ইমরান আহমদ (১২), নিজাম উদ্দিন (১০)। আহতদের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চম্পা বেগম মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় নিহত চম্পা বেগমের ভাই উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের মৃত আবদুল মছব্বিরের পুত্র সফিক মিয়া বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২১)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ভিকটিম ফারুক মিয়ার সৎ ভাই ফরিদ মিয়ার স্ত্রী ঘটনার মূলহোতা রেহেনা বেগম ও সৎ বোনের স্বামী এই গ্রামের আরশ আলীর মধ্যে অবৈধ পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। অবাদে রেহেনার সঙ্গে মেলামেশা করতে থাকেন আরশ আলী। ঘটনার কিছু দিন পূর্বে জনৈক চান মিয়ার বসত ঘরের একটি কক্ষে অবৈধভাবে মেলামেশা করা অবস্থায় তাদের দেখে ফেলেন ভিকটিম চম্পা বেগম। তাদের এই অনৈতিক কর্মকান্ড দেখে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না ফারুক মিয়া, তার স্ত্রী চম্পা বেগম, মেয়ে রিপা বেগম ও পুত্ররা। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিস বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এতে ফারুক মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন আরশ আলী ও রেহেনা বেগম। তারা ফারুক মিয়ার পরিবারের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করে ও বিভিন্ন সময়ে হুমকি প্রদান করে। এক পর্যায়ে ফারুক মিয়ার ঘরে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা নেয় আরশ ও রেহেনা। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার ২দিন আগে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামাল বাজারস্থ (আনন্দ বাজার) হুসিয়ার এন্টারপ্রাইজ থেকে ২ লিটার পেট্রোল ক্রয় করে নিয়ে আসে আরশ আলী। ঘটনার দিন রাত আনুমানিক আড়াইটায় ঘটনাস্থলে গিয়ে রেহেনা বেগমের দরজায় কড়া নাড়ে আরশ।
এসময় ঘর থেকে বের হয়ে রেহেনা ও আরশ পরিকল্পনা অনুযায়ী ফারুক মিয়ার বসতঘরের দরজার ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই (ম্যাচ) এর কাটি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ঘটনার পর কয়েলের আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে তারা (আরশ ও রেহেনা) লোকমুখে প্রচার করতে থাকে। এঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ নিশ্চিত হয় কয়েল থেকে নয়, হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে ঘরে আগুন দেয়া হয়েছে। এরপর প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ ঘটনার মূলহোতা রেহেনা বেগম ও আরশ আলীর অবস্থান শনাক্ত করে। পরে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলা থেকে রেহেনা বেগমকে ও সিলেট নগরী থেকে আরশ আলীকে গ্রেপ্তার করে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে রেহেনা বেগম ও আরশ আলী ঘটনার দায় স্বীকার করে। আরশ ও রেহেনাকে অভিযুক্ত করে ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত রায় প্রদান করেন।