সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
প্রতিশোধ নিতে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের সাজানো চার মামলা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:১১:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : নগরীর সবুজ বিপনীর এক ব্যবসায়ীর কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে তার দুই ভাইসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচারের একাধিক মামলা সাজিয়েছেন গোলাপগঞ্জের এক আইনজীবী। বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে একই ধারায় একই বর্ণনায় এসব মামলা দায়ের করে আদালতে তিনি নিজেই মামলা পরিচালনা করছেন। এমনকি, মামলার আসামিরা জেলহাজতে থাকাবস্থায় পরিবারের লোকজনকে নানাভাবে ক্ষতি করার হুমকি দিচ্ছেন।
গতকাল শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন এমন অভিযোগ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার জিনতপুর গ্রামের মো. ইউসুফ মিয়ার ছেলে মো. এমরান হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ইউসুফ মিয়া, মেজো চাচা ইদ্রিস মিয়া গ্রামের কৃষক, ছোট চাচা শাহজাহান সাজন বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। মো. শাহজাহান সাজন ২০০১ সালে জিন্দাবাজারস্থ সবুজ বিপণী মার্কেটে নিউ স্টার ইলেকট্রিক নামে নিজস্ব ব্যবসা এবং ২০০৮ সালে সমবায় ভবনে সিফাত এন্ড সামিন ইলেকট্রিক নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। চাচা শুরু থেকেই তার নিজস্ব অর্থায়নে এবং ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা করছেন, এমনকি শুরু থেকেই তিনি নিজের পরিবার নিয়ে আলাদাভাবে বসবাস করতেন।’
এমরান আরও বলেন, ‘চাচার ব্যবসার সাথে আমার বাবার ব্যবসার কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার চাচার ব্যবসা চলাকালে সিলেটে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করেছিলেন বলে শুনেছি। এমনকি আমার বাবা কোনো ঋণের জামিনদারও ছিলেন না।’
এডভোকেট আবু তাহেরের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চাচা সাজন ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই গোলাপগঞ্জ উপজেলার বারকোট গ্রামের ছবই মিয়ার ছেলে রিমন আহমদকে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেন। ২০০৮ সালে যখন সিফাত এন্ড সামিন ইলেকট্রিক নামে নতুন দোকান শুরু করেন তখন রিমন আহমদকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দেন। ২০১২ সালে রিমনের মাধ্যমে তার চাচাতো ভাই এডভোকেট আবু তাহের এর সাথে চাচা সাজনের পরিচয় হয়। তখন এডভোকেট তাহের চাচার ব্যবসা লাভজনক বিধায় বিনিয়োগ করেন বলে শুনেছি।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ব্যবসা ভালো চললেও করোনা মহামারির আঘাতে সাজন মিয়া দেউলিয়া হলে তিনি চূড়ান্ত ঋণগ্রস্ত হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হন এবং ২০২২ সালে ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যপ্রাচ্যে চলে যান। মধ্যপ্রাচ্যে চলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি এডভোকেট আবু তাহেরকে মাসিক মুনাফা প্রদান করেছেন বলে শুনেছি।’
এমরান হোসেন বলেন, ‘২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এডভোকেট তাহের বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে সর্বপ্রথম তার বিনিয়োগের ব্যাপারে জানান। তখন বাবা আবু তাহেরকে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। একপর্যায়ে গত ৭ আগস্ট এডভোকেট আবু তাহেরের ব্যাপার নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সিটি ম্যানশনে এক সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে আবু তাহের দাবি করেন আমার বাবা ও চাচা নাকি যৌথভাবে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।’
তিনি অভিযোগ করেন, সালিশ বৈঠকের এক পর্যায়ে আবু তাহের প্রকাশ্যে তার বাবাকে টাকা না দিলে মামলা করার হুমকি দেন। হুমকি প্রদানের বিষয়ে অডিও রেকর্ড তার কাছে রয়েছে।
তিনি জানান, প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ার পর গত ১৮ এপ্রিল গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পশ্চিম বারকোট গ্রামের বাসিন্দা (এডভোকেট আবু তাহেরের গ্রাম) মৃত ওয়াহিদ আলীর ছেলে রুহেল আহমদ বাদী হয়ে আমার বাবা ইউসুফ মিয়া, ছোট চাচা শাহজাহান সাজন এবং মামা হেদায়েত হোসেন খোকনসহ আমাদের অপরিচিত আরও ৩ জন লোককে আসামি করে সিলেট মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে মামলা করেন। ২২ মে গোলাপগঞ্জ উপজেলার নলুয়া গ্রামের আরেক ব্যক্তি সামছুল ইসলাম পূর্বের মামলার অনুরূপ ধারায় মামলা করেন। এর কিছুদিন পর গত ১১ জুলাই শাহপরান থানার কেওয়া আটগাঁও গ্রামের হায়দর মিয়া একই ধারায় এবং হায়দার মিয়া পুনরায় গত ৩০ জুলাই মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তিনি আরও জানান, চারটি মামলাতেই পালাক্রমে একই ব্যক্তি সাক্ষী আছেন। এমনকি মামলার নালিশে আসামিদের কৃত অপরাধের বিবরণ ঘটনার তারিখ ও সময়ের মধ্যে গুরুতর অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত। ‘আমার বাবা ও মামা গত ২৬ জুলাই ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে হাজতে প্রেরণ করেন। পরে অপর মামলাগুলোতে গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।’
এমরান বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।’ আবু তাহেরের ষড়যন্ত্র এবং আক্রোশের হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সবার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট ইলেকট্রিক মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফুর রহমান, অর্থ সম্পাদক শাহ মো. কবির, প্রচার সম্পাদক সাইদুর রহমান আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কল্যাণ সমিতি সিলেট এর সভাপতি হাজী এমএ আউয়াল, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।