রেগিং প্রতিরোধে নীতিমালা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ আগস্ট ২০২৩, ৫:৫৬:৫০ অপরাহ্ন
আদর্শ থেকে বিচ্যূত হবার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ভয়। -ফেরোরিনাস
অবশেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রেগিং ও বুলিং প্রতিরোধে প্রণীত হয়েছে নীতিমালা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও রেগিংয়ের মাত্রা অনুযায়ি প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা করা যাবে-এমন বিধান যুক্ত করে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব অপরাধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, এমনকি গভর্নিং বডির সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তারাও শাস্তির আওতায় আসবেন বলে নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে।
রেগিং’ এ অতিষ্ট শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাগত শিক্ষার্থীরা এর ‘শিকার’ হচ্ছে। বলা যায়, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য রেগিং রীতিমতো ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। ‘রেগিং’ এর নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়ে। নবাগত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, আদব কায়দা শেখানো এবং আপ্যায়নের নামে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাই পক্ষান্তরে রেগিং নামে পরিচিত।সাধারণত রেগিং (জধমমরহম) অর্থ পরিচিত হওয়া। এর বাইরে তিরস্কার করা অথবা আবেগে কিছু করাই হচ্ছে রেগিং। আরও ভালোভাবে বললে, রেগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে পরিচয় পর্ব। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্যতা গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে রেগিং বলে। রেগিং শব্দটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের সাথে বিশেষভাবে জড়িত। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি পাবলিক ভার্সিটিতে এবং মেডিকেলে এর প্রচলন রয়েছে। মূলত রেগিং হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে প্রচলিত এমন একটি ‘পরিচিতি বা দীক্ষা পর্ব’, যার মূল লক্ষ্যই থাকে প্রবীণ শিক্ষার্থী কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা। র্যাগিং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে প্রচলিত রয়েছে। তবে অনুরূপ সংস্কৃতি বিশ্বের আরও অনেক দেশেও বিদ্যমান। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রেগিংয়ের ঘটনা ঘটছে অসংখ্য। এর বেশিরভাগই প্রকাশ্যে আসে না। কেউ কেউ আবার এগুলোকে মেনেও নিতে শিখে যায়। রেগিং নামক ভয়াবহ সংস্কৃতিটি উত্তরাধিকারসূত্রে এক বর্ষের শিক্ষার্থীদের থেকে অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে হস্তান্তর হতে থাকে। ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাচীনকালে রেগিংয়ের উৎপত্তি হয় শিক্ষাঙ্গণের বাইরে। পরবর্তীতে শিক্ষাঙ্গনে রেগিং প্রবেশ করার পর ধীরে ধীরে এটি একটি সাংগঠনিক ‘ক্যাম্পাস সহিংসতা’র রূপ ধারণ করে।
রেগিংয়ের নামে অনাচার অপকর্ম বন্ধ হোক। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী এমন অপরাধ করলে তাকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি মানসিকভাবে কাউন্সেলিং করাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও রেগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত চূড়ান্ত নীতিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এটি কার্যকর করাই আসল কথা।