কনকর্ডিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল ভার্সিটির ৫ কোটি টাকার স্কলারশীপ পেলেন সিলেটের দীপিতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১১:৩২:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের দীপিতা সিনহা কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটির প্রায় ৫ কোটি টাকার স্কলারশীপ পেয়েছে। কনকর্ডিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ দেয়া হয় মাত্র দুটি। এবার এই দুটি স্কলারশিপের মধ্যে একটি অর্জন করেছে বাংলাদেশ, অপরটি রুয়ান্ডা। নি:সন্দেহে বলা চলে এই অর্জন অনেকটা বিশ্বজয়ের মত।
বিশ্বের প্রখ্যাত একটি বিদ্যাপীঠের নাম কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি। এই ইউনিভার্সিটিতে মেধাবী ও সৃজনশীল শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করে থাকেন। গোটা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা আবেদন করলেও স্কলারশিপ দেয়া হয় মাত্র দুটি।
স্কলারশীপের এই গৌরব অর্জনকারী দীপিতা পড়বেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। স্কলারশিপ বিজয়ী অপর শিক্ষার্থী রুয়ান্ডার রেইন। প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশীপ অর্জনকারী প্রত্যেকের জন্য সর্বসাকুল্যে কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ব্যয় করবে প্রায় ৫ কোটি টাকা করে।
মেধাবী দীপিতা সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ ও রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান, গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নমিতা সিনহার জ্যেষ্ঠ কন্যা। দীপিতা বিশ্বজয়ের পর তাদের পুরো পরিবার কানাডার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন। গতকাল সোমবার তারা কানাডায় পৌঁছার কথা।
দেশত্যাগের প্রাক্কালে মেধাবী দীপিতা সিনহা জানায়, স্কুল ও কলেজে শিক্ষকরা আমাকে সব লিডারশিপের দায়িত্ব দিতেন। এটা আমাকে লিডারশিপ সম্পর্কে জানতে বাধ্য করে। তাছাড়া প্রত্যেক মানুষেরই একটা লক্ষ্য থাকে। সেই অনুযায়ী স্বপ্ন লালন করে এবং এগোয়। আমিও আমার কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। এজন্য আপাতত কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। সাময়িকভাবে একটু দূরে চলে যেতে হচ্ছে আমার প্রিয় মা বাবা, প্রিয় সিলেট ও প্রিয় মাতৃভূমি থেকে।
দীপিতা আরো জানান, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ইচ্ছা তার প্রবল। অনর্গল কথা বলতে পারেন বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, কোরিয়ান ভাষায়। এখন ফ্রেঞ্চ ভাষা চর্চা করছি। একের পর এক ভাষা শিক্ষা এটা তার অন্যতম হবি। দীপিতার মতে, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। আগের মত শুধু জাতি-সমাজ নয়, এখন বিশ্বজাতি-বিশ্বসমাজের কি কল্যাণ করা যায় তা নিয়েই ভাবতে হবে।
দীপিতার বাবা সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ জানান, বাবা-মায়ের চোখে সন্তানরা সব সময়ই শিশু। তাই মেয়েকে একা বিদায় দিতে না পেরে আমরা পুরো পরিবার সঙ্গী হয়েছি। তার ভর্তি সম্পন্ন করে দেশে ফিরবো। সন্তানের এমন সফলতা শুধু আনন্দের নয়, গর্বেরও- এমন বক্তব্য তার।
দীপিতার মা গাইনী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: নমিতা সিনহা জানান, নিজের সারা জীবনের অর্জন নিয়ে যতোটা আনন্দিত মেয়ের এটুকু অর্জনে তারচে শত শতগুণ আনন্দিত। মানবিক মানুষ হোক এটাই প্রত্যাশা।
দীপিতা সিনহা পড়াশুনা সিলেটের ব্লু বার্ড হাইস্কুল, সিলেট অগ্রগামী বালিকা বিদ্যালয় ও এমসি কলেজে। স্কুল জীবনে দীপিতা সব সময়ই ক্লাশ ক্যাপ্টেন ছিল। সাইন্স ক্লাবের সদস্য দীপিতা রোবট তৈরীসহ বিভিন্ন ইভেন্টে পুরস্কৃত হয়। করোনা মহামারীর সময়ে সতীর্থদের নিয়ে ‘দুর্বার’ নামের সামাজিক সংগঠন গঠন করে বৃক্ষরোপণ করে। করোনার সময়ে ‘ডোর ইজ ওপেন’ নামের মানবিক উদ্যোগ নেয় সতীর্থদের নিয়ে। তারা টানা একমাস ছিন্নমূলদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করে মানবিক দায়িত্ব পালন করে পায় ব্যাপক প্রশংসা। স্কলারশিপ পাওয়ার আগে মেধাবী দীপিতা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘ছায়া জাতিসংঘ’ ডিবেটে কানাডার প্রতিনিধিত্ব করেন। সেই ডিবেটে ‘বেস্ট থিংকার্স’ স্বীকৃতি পান এই মেধাবী শিক্ষার্থী। ইন্টার স্কুল গণিত অলিম্পিয়াডে সেরা হওয়ার পর যান ইংলিশ অলিম্পিয়াডের বিভাগীয় গ্রান্ড ফিনালে। আইইএলটিএস এ সর্ব্বোচ্চ স্কোর পাওয়া মেধাবী দীপিতা জাতীয় বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতায় জেলা চ্যাম্পিয়ন হন।