ক্যান্সার আর দূরারোগ্য নয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ৫:৪৪:০৫ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
সমাজে রোগ বালাই আছে, থাকবে। রোগী চিকিৎসা নেবে, ঔষধ খাবে, সুস্থ হবে। কিন্তু ক্যান্সার দূরারোগ্য ও জীবন কেড়ে নেওয়া রোগ। ক্যান্সার রোগ সারে না। রোগীকে কবরে নিয়ে তার নিস্তার। তা সত্ত্বেও সুখবর এসেছে মানবজাতি ক্যান্সার জয় করেছে। গবেষণায় অনেকটা সাফল্য এসেছে। সর্বশেষ সাফল্যটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। ক্যান্সার বহুরকমের। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ও গবেষকরা রেকটাল ক্যান্সার চিকিৎসায় ঔষধ আবিষ্কার করে সাফল্য পেয়েছেন। রেকটাল হলো মলদ্বারের ক্যান্সার। আবিষ্কৃত ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই সাফল্যের ঘোষণা দেন বিজ্ঞানীগণ। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীরা প্রায় ছয় মাস ধরে ডোস্টারলিম্যাব নামে একটি ওষুধ সেবন করেন। তাদের শরীরে ক্যান্সার ছিল। ট্রায়াল শেষে দেখা যায়, তাদের শরীর থেকে ক্যান্সার নির্মূল হয়ে গেছে। বিশ্বে এই প্রথম ক্যান্সারের চিকিৎসায় ঔষধে শতভাগ ফলাফল পেয়েছেন চিকিৎসকরা।
এত সাফল্যের পরও দেখা যায়, ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগ সুপ্ত থাকে, লুকায়িত থাকে। ক্যান্সারের জন্ম হয়ে গেছে অথচ টেরই পাওয়া যায় না। ক্যান্সার সহজে ধরা পড়ে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো চিকিৎসা করাও সম্ভব হয় না।
ক্যান্সার শুনলেই মানুষ মৃত্যু ভয়ে কুকড়ে যায়। বেফানা হয়ে যায়। ভয়ের কারণে মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়ে যায়। এক সময় দেখা যেত বয়স বাড়লে ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু এখন যেকোনো বয়সে যে কোনো রোগ হতে পারে। ইদানিং ক্যান্সার আক্রমণ বাড়ছে। খেয়াল রাখতে হবে শরীরে দেহে যে কোনো ক্ষত হলে এবং তা না শুকালে, অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে, মল-মূত্র ত্যাগের অস্বাভাবিকতা, স্তনের গঠনের পরিবর্তন, কোনো কিছু গিলতে অসুবিধা, ক্রমান্বয়ে ওজন হ্রাস ও ক্ষুধামন্দা, গলায় কর্কশ শব্দ, কাশি, অকারণ ক্লান্তি, প্রায়ই জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
শুনতে অবাক লাগে অনেক রকমের ক্যান্সার আছে। এখন পর্যন্ত দু’শ প্রকারের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। এই গবেষণার ফল হিসেবে ক্যান্সারের ঔষধ আবিষ্কার হয়েছে। এই আবিষ্কারকে আরও উন্নতির পথে নিয়ে যেতে হবে এবং রোগ-মুক্তি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যয়সাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। এই ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এই ঔষধ আবিষ্কার একটা বড় সাফল্য কারণ এতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো এই ঔষধ প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে হবে, গরিবদের নাগালের মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে উচ্চবিত্ত ধনীদের মধ্যে চিকিৎসা সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। ডাক্তারের ফি, হাসপাতাল খরচ, ওষুধের মূল্য নি¤œবিত্ত গরিবের নাগালের মধ্যে আনতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারটি যেমন সকলের জন্য সুসংবাদ তেমনি চিকিৎসাও সকলের জন্য সুসংবাদ হতে হবে। সব হাসপাতালে ক্লিনিকে ক্যান্সার রোগীর জন্য একটা বা দুইটা বেড সংরক্ষিত রাখলে গরিব রোগীদের জন্য আসান হবে। রোগ ধনী-গরিব সকলের হয়, সকলেরই চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। কোনো ক্লিনিকে বিত্তবানরা নিজ পিতা-মাতা বা সন্তানদের নামে বেড রাখলে যেমন পিতামাতার নাম স্মরণীয় থাকবে, তেমনি প্রয়োজনে দুঃখিরা তা থেকে সুবিধা পাবে।
সবচেয়ে বড় কথা, সবাই সচেতন হবেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন, ন্যূনতম অসুবিধা বা সন্দেহ হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে, চিকিৎসা নিতে হবে। সব রকমের ক্যান্সারের চিকিৎসা ও সফলতা থাকা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সময়ে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই গবেষণারই ফল হচ্ছে উক্ত ঔষধ। ক্যান্সারের চিকিৎসার ইতিহাসে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটেছে।
লেখক : সিনিয়র কলামিস্ট।