ভরা মৌসুমেও খাসিয়া পানের উৎপাদন কম ॥ বিপাকে চাষিরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ৬:১৯:৪৮ অপরাহ্ন
মৌলভীবাজার থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ষা খাসিয়া পান উৎপাদনের ভরা মৌসুম। সাধারণত একটি পান গাছ থেকে অন্য সময়ে যে পরিমাণ পান তোলা হয়, বর্ষা মৌসুমে একই গাছ থেকেই অন্য সময়ের তুলনায় দেড় থেকে দুই গুণ বেশি পান পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর খরার প্রভাবে পান উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে, যে পান তোলা হচ্ছে, সেই পান আকারে অন্য মৌসুমের চেয়ে অনেক ছোট।
অনাবৃষ্টির কারণে পানের উৎপাদন স্বাভাবিক সময়ের মতো বাড়েনি। এতে পান চাষের ওপর নির্ভরশীল জেলার বড়লেখায় ১৯টি, কুলাউড়ায় ৩০টি, জুড়িতে ৫টি, রাজনগরে ১টি, শ্রীমঙ্গলে ১২টি ও কমলগঞ্জে ৭টি মিলিয়ে ছোট বড় প্রায় ৭৫টি আদিবাসী খাসিয়া পান পুঞ্জিতে বসবাসরত খাসিয়ারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আদিবাসী সংগঠন খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল ও পুঞ্জি সূত্রে জানা গেছে, অন্য সময় একটি পানজুম থেকে প্রতিদিন তিন কুড়ি পান তোলা গেলেও জুন থেকে আগস্টে পাঁচ কুড়ি পান তোলা যায়। ২০ কান্তায় এক কুড়ি। এক কান্তায় ১৪৪টি পান থাকে। এবার ভরা মৌসুমে পানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এদিকে, এবার এক কুড়ি পানের (২৮৮০টি পান) দাম অন্য বছরের মতোই ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। কিন্তু দাম থাকলেও পান উৎপাদন কম হওয়ায় চাষিদের লাভ হচ্ছে না।
মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ছোট-বড় ৭৫টি খাসি পুঞ্জি আছে। এসব পুঞ্জিতে আদিবাসী খাসি (খাসিয়া) লোকজন বসবাস করেন। বৃহত্তর সিলেটে আছে ৮৩টি পুঞ্জি। ৮৩টি পুঞ্জিতে প্রায় ৩০ হাজার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজনের বাস। খাসিয়া জনগোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎসই হচ্ছে খাসিয়া পান চাষ।
খাসিয়া পান চাষিরা বলেন, পাহাড়ি টিলা ভূমিতে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা নেই। এই পান চাষ পুরোটাই প্রকৃতি-নির্ভর। মৌসুমি বৃষ্টির ওপর চাষিদের নির্ভর করতে হয়। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না তাদের। বৃষ্টি না হলে পান উৎপাদন ক্ষতির মুখে পড়ে। এ বছর খাসিয়া পান উৎপাদন অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে। দীর্ঘ খরার কারণে সময় মতো পান গাছের পরিচর্যা করা সম্ভব হয়নি। পান গাছ পরিচর্যার সময় হচ্ছে জুন থেকে আগস্ট মাস। এই সময় পান উৎপাদনেরও ভরা মৌসুম। অনেক দেরিতে বৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পান উৎপাদনে। চক্রাকারে একটি পান গাছ থেকে এক থেকে দেড় মাস পরপর একবার পান তোলা হয়ে থাকে। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। একটি পান গাছ থেকে পান তুলতে দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত বিরতি দিতে হচ্ছে। সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় পানের উৎপাদন কম হচ্ছে।
পান চাষিরা আরও বলেন, শুধু পান উৎপাদনই কমেনি, পান পাতার আকারও ছোট হচ্ছে। পানের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটছে না। বাজারে বড় পানের চাহিদা বেশি। বড় পান হলে যে দাম পাওয়া যেত, ছোট পানে সেই দাম পাওয়া যায় না।
কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির পানচাষি শামিম পামথেত বলেন, খরার কারণে সঠিক সময়ে গাছে পান আসেনি। এখন পানের ভরা মৌসুম। এখনো বৃষ্টি খুবই কম হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পুরোপুরি পান তোলা যায় না, পরিচর্যা করা যায় না।
শ্রীমঙ্গলের পানচাষি রাজু মার্চিয়াং বলেন, পানগাছ থেকে নতুন চারা কাটাকে বলা হয় ‘বুট টাং’। এবার খুব কমই চারা কাটা হচ্ছে। এখন গাছ পরিচর্যার মৌসুম। এ মৌসুমে একটি পানজুমে (পানখেতে) প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকের খরচ তোলাই কঠিন হয়ে পড়ছে।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ও মাগুরছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (সমাজপ্রধান) জিডিশন প্রধান সুছিয়াং বলেন, পানচাষ খুব সতর্কভাবে ও যতœ নিয়ে করতে হয়। অনাবৃষ্টিতে পান পরিচর্যায় দেরি হয়ে গেছে। এতে পানের উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।