বাংলাদেশি ক্রেতা-দর্শনার্থীতে মুখর ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০২৩, ১১:২২:০৯ অপরাহ্ন
ভারতীয় শেডে ভিড়, বাংলাদেশী শেড ক্রেতাশূন্য
আবিদুর রহমান, কোম্পানীগঞ্জ থেকে : হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার সরব উপস্থিতি। আছেন দর্শনার্থীও। দোকানিরা সাজিয়ে রেখেছেন বাহারি পণ্য। সবাই ব্যস্ত। নির্ধারিত সময়ে কেনাবেচা-ঘোরাঘুরি সব শেষ করতে হবে। ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের ভারতীয় শেডে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও উল্টো চিত্র ছিল বাংলাদেশি শেডে। বাংলাদেশের দোকানগুলো ছিল ক্রেতাশূন্য-নিষ্প্রভ। বাংলাদেশের হাঁস-মোরগ, মাছ-মাংস, ডিম ও শুটকি নিতে ভারতীয়দের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে বর্ডার হাট নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি থাকলেও বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা হতাশ।
চলতি বছরের ৬ মে এই হাটের উদ্বোধন হয়। ভারতের মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস ও কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে এই বর্ডার হাটের অবস্থান। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাটের উত্তরে ভারতের উঁচু মেঘালয় পাহাড়। পূর্বে শুল্ক স্টেশন দিয়ে প্রবেশ করছে চুনাপাথর বহনকারী ভারতীয় গাড়ি। এর পূর্বে ধলাই নদী। স্থানীয়দের পাশাপাশি ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর ঘুরতে আসা পর্যটকও ঢুকেন হাটে। তাঁরা হাটে কেনাকাটাও করেন। হাট বসে প্রতি শনি ও বুধবার। হাটের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা। হাটের জায়গাটি কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া। দুই দিকে দুটি ফটক আছে। একটিতে বাংলাদেশের বিজিবি, অন্যটিতে ভারতের বিএসএফের পাহারা আছে। টিকিট ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঢুকতে পারেন না। হাটে রয়েছে দুই দেশের পঞ্চাশ দোকান। একজন ক্রেতা এক দিনে সর্বোচ্চ ৫০ ডলার সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য কিনতে পারেন।
ভারতের মাঝাই এলাকার বাসিন্দা অরুণ হাজং নামের এক দোকানি বলেন, তিনি ও তাঁর মা মায়া হাজং মিলে হাটে বিস্কিট ও কসমেটিকস বিক্রি করেন। এক দিনে তাদের ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয়।
ভারতের রিংকি জাওরা’র দোকানে বৃষ্টির মধ্যেই ভিড় জমিয়েছেন ক্রেতারা। তাঁর দোকানের একপাশে কসমেটিকস, বিস্কিট ও জুতা। আরেকপাশে নাশপাতি, আনারস ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল আছে। সীমান্তের ওপারে মাঝাই কেলেপ্সি এলাকায় তাঁর বাড়ি। স্বামী জুইকে সহযোগী হিসেবে রেখেছেন। রিংকি বলেন, প্রতি হাটে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ টাকার মতো ব্যবসা হয় তাদের।
এদিকে, বাংলাদেশি শেডের দোকানিরা বলছেন ভিন্ন কথা। ক্রোকারিজ পণ্য বিক্রি করেন উপজেলার কালিবাড়ি গ্রামের হানিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রতিটি দোকানে প্রতি হাটে লাখ টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়। বাংলাদেশিদের দোকানে হয় সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয় হাজার টাকা।
পাড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দা রহমত আলী প্লাস্টিকের পণ্য, ফুড আইটেমসহ ভেরাইটিজ মালপত্র বিক্রি করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের হাঁস-মোরগ, মাছ-মাংস, ডিম ও শুটকি নিতে ভারতীয়দের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না।
কাঁঠালবাড়ি গ্রামের সাইফুল আলম একটি দোকান চালান এখানে। এ দোকানি বলেন, সব মিলিয়ে বেচাবিক্রি মন্দ না। দিন দিন হাট জমছে। তবে, বাংলাদেশিরা ভারতীয় পণ্য কিনছেন দেদারছে। কিন্তু ভারতের ক্রেতা নাই বললেই চলে। এদিকে, হাট জমলেও হাটে যাওয়ার রাস্তাটি কাঁচা হওয়ায় মানুষের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান কয়েকজন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, তারা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছেন। হাট থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ করে দেবে। জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া হাটের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি করবে বলেও জানান ইউএনও।