পুলিশ-বিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষে হবিগঞ্জ রণক্ষেত্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২৩, ৫:৫০:৪৬ অপরাহ্ন
ওসিসহ আহত তিন শতাধিক ॥ কয়েকজন গ্রেফতার
হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : হবিগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসিসহ তিন শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ দফায় দফায় চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এতে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সহ¯্রাধিক রাউন্ড বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ প্রায় ৮ থেকে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সংঘর্ষে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসিসহ ১০-১২ পুলিশ সদস্য ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ প্রায় তিন শতাধিক আহত হয়েছেন বলে পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
তবে পুলিশের ভাষ্য, পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়েছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল চারটায় হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। এর আগে বিএনপির নেতা-কর্মীরা শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় অবস্থিত বিএনপির জেলা কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন। বিকেল পাঁচটার দিকে সমাবেশস্থল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জি কে গউছের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে আসামাত্রই হবিগঞ্জ সদর থানার একদল পুলিশ বাধা দেয়। এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিত-া শুরু হয়। পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এক সময় উভয়পক্ষ মারমুখী হয়ে উঠলে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসও ছুড়ে।
এদিকে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের একটি অংশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। দলের অপর একটি অংশ শহরের শায়েস্তানগর মোড়ে অবস্থান নিয়ে একইভাবে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে এবং পৌরসভার সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ পুনরায় সংগঠিত হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করে। থেমে থেমে এ সংঘর্ষ প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলতে থাকে। পুলিশ মুহুর্মুহু কয়েক’শ গুলি ছুঁড়ে। এ সময় শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে সংঘর্ষের পুরোটা সময়।
সন্ধ্যার আগপর্যন্ত পুলিশের গুলি ছোঁড়া ও পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত ছিল। সন্ধ্যার আগে বৃষ্টি শুরু হলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় পুলিশের বাধার মুখেই বিএনপির অফিসের সামনে চলে কর্মসূচি। সংঘর্ষকালে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেবসহ পুলিশের ১০ থেকে ১২ সদস্য আহত হন। আহত বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে মনিরুজ্জামান চৌধুরী, রনি, সাজিদুর রহমান, পলাশসহ ১৫ জন হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। আহত ব্যক্তিদের অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে জেলা সদরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। সংঘর্ষস্থল থেকে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীসহ ৮ থেকে ১০ জনকে আটক করেছে।
বিএনপি নেতা জি কে গউছ দাবি করেন, তারা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছিলেন। এ সময় পুলিশ হঠাৎ তাদের ওপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি ছুঁড়তে থাকে। তাদের প্রায় ৩০০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দেড় শতাধিক গুলিবিদ্ধ বলে দাবি করেন তিনি।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মী পুলিশকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকলে পুলিশ নিজেদের রক্ষায় রাবার গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের আক্রমণে তিনিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয় বলে তিনি জানান।
হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে শহরের প্রধান সড়কে মিছিল করে হট্টগোল সৃষ্টির চেষ্টা করে। তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। তাদের হামলায় হবিগঞ্জ সদর থানার ওসিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। কী পরিমাণ বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা এখনো হিসাব করা হয়নি। দুই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।