খটকা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২৩, ৬:২১:৪৫ অপরাহ্ন
ফারুক আহম্মেদ জীবন
মেসেঞ্জারে হঠাৎ কেউ ওপাশ থেকে নীলের মোবাইলে রিং দিলো। রিংটোন বেজে উঠতেই নীলের নজর গেলো মোবাইলটার দিকে। স্ক্রিনে দেখলো নীলিমা নামের এক অপরিচিতা মেয়ের কল। কে এই মেয়েটি?
কেনোইবা তাকে কল দিলো? হাবিজাবি সাতপাঁচ ভাবতে লাগলো নীল।
মেয়েটি যে নীলের একেবারেই অপরিচিতা তা নয়। অবশ্য দুই-একবার তার সাথে মেসেঞ্জারে কথা হয়েছে, এই যা। ইতিপূর্বে জেনেছে তার নাম নীলিমা। অবশ্য এটা তার ছদ্মনাম। তার ভাল নামটা কী? জিজ্ঞাসা করলে বলেছে
ঊর্মিতা। সেটাইবা কতোটুকু সত্য, নীল আজও জানেনা। আর সত্যি বলতে, নীলের মনে জানার জন্য কোন কৌতূহলও জন্মায়নি। তাই জানার তেমন কোন চেষ্টাও করেনি নীল। মেয়েটির সাথে নীলের শেষ কথা হয়েছে আজ থেকে বছরখানেক আগে। প্রথমে নীলিমাই মেসেজে সালাম দিয়ে কেমন আছেন? জিজ্ঞাসা করেছিলো নীলকে। তারপর আপনি কি কবিতা লেখেন? আরো নানান রকম কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে একপর্যায় তার লেখালেখি প্রকাশ করা নিয়ে নীলিমা বলে তার একটু হেল্প দরকার। নীলও তার সাধ্যমত নীলিমাকে সাহায্য করে। কোন প্রকাশনী থেকে বই বের করলে ভাল হবে। সে ব্যাপারে নীল মোটামুটি ধারণা দেয় নীলিমাকে। ব্যস, এ পর্যন্তই। তারপর আর কথা হয়নি নীলিমা মেয়েটির সাথে। আর তাছাড়া নীল সাহিত্য জগতে থাকলেও খুব
একটা কারোর সাথে তার কথা হয়না। ফ্রেন্ডলিস্টে নীলের বহু ছেলে বা মেয়ে বন্ধু আছে। কিন্তু দুই একজনের সাথে তার যা একটু কথা হয়। তাও আবার সাহিত্য বিষয় নিয়েই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দরকার বিশেষে।
এদের মধ্যে একজন মাত্র নীলের একান্ত ঘনিষ্ঠ খুব কাছের বন্ধু ছিলো বলা চলে। যার সাথে মাঝেমধ্যে প্রায় মেসেজে কথা হত। তা প্রায় বছর দুই হয়ে গেছে কোন এক কারণে একজন আরেকজনের প্রতি অভিমান করে এখন আর কারোর সাথে কারোর কথা হয়না। এসব বিভিন্ন বিষয় ভাবতে ভাবতে নীল কেমন যেনো এক অজানা সংশয়ে একটু ইতস্তত করতে করতে ভয়ার্ত মন নিয়ে কিছুটা কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা ধরলো। বেশ ধড়ফড় ধড়াম ফটাস করছে নীলের বুকের মধ্যে নীল তা অনুভব করছে। হঠাৎই যেনো তার হার্টের ধুকপুকানিটা পূর্বের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে।
নীল মনেমনে ভাবছে ছদ্মনামের অন্তরালে এই মেয়েটা তার সেই প্রিয় মানুষটা নয় তো? এটা নীলের ভাবারও অবশ্য কারণ আছে। আর সে কারণটা হলো তার সে প্রিয় মানুষটা নীলকে যে নামে সম্বোধন করতো। এই মেয়েটাও কথার মাঝে একদিন সেই নামেই নীলকে ডেকেছিলো। নীল তো প্রথমে মনের অজান্তেই আকস্মিকভাবে চমকে উঠেছিল। জিজ্ঞাসাও করেছিলো কেনো সে এ নামে তাকে সম্বোধন করলো। নীলিমা উত্তরে নীলকে বলেছিলো আপনি খুব ভালো লেখেন তাই ও নামে ডাকলাম।
তব্ওু…। যেনো বিশ্বাস করতে রাজি নয় নীলের সন্দেহ পরায়ণ মন। নীল ভাবছে এটাও কি সম্ভব?
আজও মনের সে খটকা নীলের যায়নি। যে নাম করণ তাকে একদিন তার অতি প্রিয় মানুষটি করেছিলো সেই নাম একইভাবে…। অন্য আরেকটি মেয়ে কিভাবে। কিছুই যেন ভাবতে পারছেনা নীল। মনের সন্দেহটা দূর হওয়া যেমন তেমন আরো যেনো বেশি ঘনঘটা হয়ে তা বিস্তার আকৃতিতে ডানা বেঁধে নীলের দুর্বল মনটাকে ধোয়াশা করে তুলছে।
রিং বেজেই চলেছে। কল রিসিভ করবে কি করবেনা এসব নিয়ে ভাবতে লাগলো নীল। তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে। তারপর ভাবলো দেখায় যাক না কি বলে নীলিমা নামের এই মেয়েটি। সে মনে মনে যা ভাবছে তার সন্দেহ তো মিথ্যাও হতে পারে। এই ভেবে নীল একসময় মোবাইলের কল রিসিভ বাটনে হাত রাখলো…।