দিরাইয়ে এখনো সকল ইউনিয়নের সাথে গড়ে ওঠেনি সড়ক যোগাযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০২৩, ২:১৮:০৭ অপরাহ্ন
দিরাই (সুনামগঞ্জ) থেকে সংবাদদাতা : হাওর বেষ্টিত সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়ন ও গ্রামগুলোর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। চারপাশে শুধু পানি আর পানি। হাওরের এই পানির মধ্যেই উঁচু একখন্ড ভূমি। সেখানেই বসতবাড়ি তৈরি করে কয়েক হাজার পরিবার বসবাস করছে বংশপরম্পরায়।
শুষ্ক মৌসুমে মেঠো সড়ক দিয়ে হেঁটে কোনো রকমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষায় নৌকা ছাড়া নেই কোনো উপায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানসম্মত বাসস্থান এই তিনটি মৌলিক অধিকার থেকে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত। হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনের ভূমিকাও নামে মাত্র। ফলে হাওরবাসীর পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।
দিরাই উপজেলা ৯টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা- পায়ে হাঁটা উপজেলার মোট পাকা রাস্তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) ১৫ কিলোমিটার, এলজিইডি পাকা ১৮২ কিলোমিটার, কাঁচা সড়ক- ২৬০ কিলোমিটার।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও দিরাই উপজেলার ইউনিয়ন সমূহে এখনো সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি । নির্মিত হয়নি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী সড়ক। এতে ভাটির এ জনপদের মানুষ অনেক ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বর্ষাকালে গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা। ফলে দুর্ভোগের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীসহ গ্রামবাসীকে।
বর্ষায় সকল ক্ষেত্রে উপজেলার ৯ ইউনিয়ন থেকে ধীরগতির ইঞ্জিন চালিত নৌকা অথবা উচ্চ মূল্যের দ্রুতগতির স্পিডবোট ব্যবহার করতে হয়। হেমন্তে পায়ে হাঁটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। একইভাবে কোনো গ্রামে সংঘর্ষ কিংবা হত্যার ঘটনা ঘটলে থানা পুলিশকেও আসতে হয় অনেক কষ্ট করে।
কুলঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা পাবেল তালুকদার জানান, হাওরের অবস্থান, আকৃতি, খেয়ার ধারণ ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে ছোট-ছোট ইঞ্জিন চালিত নৌকা যাত্রীবহন করে থাকে। স্বাভাবিক সময়ের পাশাপাশি বর্ষাকালেও প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাওর পাড়ি দিচ্ছেন মানুষ। আর সারাক্ষণ ঢেউয়ে উত্তাল এসব হাওরে স্পিডবোট অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন রশিদ লাবলু জানান, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। কিন্তু তার ছিটে ফোটাও আমাদের এলাকায় পড়েনি। তিনি বলেন, আমাদের এই এলাকার রাস্তা নিয়ে অনেকবার বর্তমান এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তার সাথে আলাপ করেছি কিন্তু তার কোন প্রতিকার পাইনি।
কুলঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরার হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এটা একমাত্র শেখ হাসিনার সরকার আছে বলেই সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা দিরাই-শাল্লাবাসি কাংখিত উন্নয়ন হতে বঞ্চিত। তার একমাত্র কারণ সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব।
এলজিইডির সদর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, উন্নয়নের দিক থেকে দিরাই উপজেলা অন্যান্য উপজেলা থেকে অনেক পিছিয়ে। তার একমাত্র কারণ দিরাইয়ের রাজনীতি। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু এলাকায় কাজ চলমান আছে।
দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী জানান, হাওরপারে সড়ক না করাই ভালো, সরকার পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প করবে না। আমরা টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাসী, যা পরিবেশ রক্ষা করে করা হবে।