চিকিৎসায় বিদেশযাত্রা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২৩, ১:০৪:০২ অপরাহ্ন
চরিত্রকে পুনরুদ্ধারের চেয়ে নির্মল রাখার চেষ্টা করা অনেক সহজ। -টমাস পেইন
চিকিৎসার্থে বিদেশযাত্রা নতুন কিছু নয়। চিকিৎসার জন্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করছে মানুষ প্রতিনিয়ত। অপেক্ষাকৃত উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগিরা দেশ ছাড়ছে। তবে আমাদের দেশে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা আশপাশের অন্য দেশগুলোর তুলনায় একটু বেশি। একটি জরিপে বলা হয়েছে, প্রতিবছর ৭ লাখ বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গমন করে এবং এতে ব্যয় হয় ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে, দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হলে রোগিদের বিদেশ যাওয়ার প্রবনতা কমে আসতো।
বিত্তশালীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতেই পারে। এতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে যাদের বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই, তাদের কথাই আসল। আমাদের দেশে এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া, দেশে কাংখিত চিকিৎসা পেলে বিত্তশালীরাও বিদেশে যেতে চাইতো না।সমস্যাটা এই জায়গায়। বিত্তবান বা বিত্তহীন কেউই উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞগণ। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় করেও যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে মানুষ বিদেশ যেতে বাধ্য হয়। এটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ছেনা। বরং অনেক ক্ষেত্রে সেবার মান নামছে নিচের দিকে।
বিশেষ করে সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থায় মানুষের অসন্তুষ্টি বেড়েই চলেছে। বাড়ছে মানুষের চিকিৎসাব্যয়। যেখানে সরকারি খাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা, সেখানে পরিবারের নিজ পকেট থেকে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ের ৬৭ শতাংশ বহন করতে হয়। এই সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো সর্বত্র গড়ে ওঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নেই। আর ব্যয়বহুল যে কয়টি উন্নতমানের হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে, সেগুলো সাধারণের নাগালের বাইরে। অথচ বিদেশে একই মানের হাসপাতালে চিকিৎসা, হোটেল, যাতায়াত, এমনকি সেখানে পর্যটন ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করলেও তা বাংলাদেশের উন্নতমানের হাসপাতালগুলোতে তুলনায় ব্যয় কম হয়। সর্বোপরি, স্থানীয় চিকিৎসকদের ওপর আস্থার অভাব ও রোগ নির্ধারণে ব্যর্থতাই হচ্ছে বিদেশমুখি প্রবনতার অন্যতম কারণ।
স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় হাজার হাজার কোটি টাকা। এতো টাকা ব্যয় করার পর রোগিরা প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। তারা পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। যাদের সামর্থ্য নেই, তাদের নিয়তিই ভরসা। সময় পাল্টাচ্ছে। নানা ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সামনে। চিকিৎসাক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন জরুরি। আর এভাবেই চিকিৎসার জন্য বিদেশগামি জনস্রোত ঠেকানো যাবে।