ভাঙচুর ও মারধরের প্রতিবাদ
অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা, আটক ৪
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ আগস্ট ২০২৩, ৮:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন
মেডিকেল রিপোর্টার : সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড ভাঙচুর, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর, নার্সদের হেনস্থার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় হামলাকারী চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যে ৭টার পর এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ডে ভাঙচুর ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর করে রোগীর স্বজনরা। এমন ঘটনার পরপরই অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে-হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুল হক ভূঞা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেন। হাসপাতালের পরিচালক আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বুঝিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার হার্ট, ব্রেইন ও কিডনির সমস্যা নিয়ে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন (৬৫) হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় তিনি মারা যান। এ সময় রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজন ও স্বজনেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৫ নম্বর ইউনিটসহ হাসপাতালের পঞ্চম ও চতুর্থ তলার বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর চালায়। হামলাকারীরা অনেক ওষুধও বিনষ্ট করার পাশাপাশি দায়িত্বরত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের হুমকি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং চারজনকে আটক করে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, আবদুল মালিক (৫৪), সাবেল আহমদ, জুবেল আহমদ ও জুয়েল আহমদ। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে জানা গেছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের হেনস্থা করেন। এসময় চিকিৎসকরা দৌড়ে পাশের ওয়ার্ডে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এরপর রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডের ভেতরে চিকিৎসকের কক্ষ ও নার্সের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মো. রাকিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, মারা যাওয়া রোগীর স্বজনরা দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ক্রমাগত ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান এবং শারীরিক হেনস্থা করার চেষ্টা করে। এরপর হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনা প্রমাণ করে হাসপাতালে চিকিৎসকদের কোন সুস্থ কর্মপরিবেশ নেই। এ অবস্থায় হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তারদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, দোষীদের বিচারের দাবিতে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয়া হলো।
ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডাঃ রাকিব হোসেন জানান, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ ও নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করার দাবিতে তারা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন।
হাসপাতালের অন্য একটি সূত্র জানায়, ইন্টার্নরা কর্মবিরতিতে গেলেও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রাখতে মিড লেভেলের চিকিৎসকসহ এর সাথে সংশ্লিষ্টরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন ওই রোগীর স্বজনেরা। গতকাল সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে হামলাকারী চারজনকে আটক করেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সুচিকিৎসা না পেয়ে ওই রোগী মারা গেছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা চাই’ উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। রাত আটটার দিকে পরিষদের সভাপতি মো. রাকিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এটি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোগীর স্বজন নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে তা-ব চালায়। তারা শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ক্রমাগত ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি প্রদান এবং শারীরিক হেনস্থা করার চেষ্টা চালায়। এ ছাড়া তাঁরা কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কক্ষ ও নার্সেস স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ ঘটনা প্রমাণ করে হাসপাতালে চিকিৎসকদের কোনো সুস্থ কর্মপরিবেশ নেই এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই।