রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা
ওসমানী হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘট, ভোগান্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ৪:৫৯:৩৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হামলা ও হেনস্তার প্রতিবাদে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। সোমবার রাত থেকে তাদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। বিকেলে চার টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে বৈঠক হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। অন্যদিকে, হাসপাতালের ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ মৃতের তিন পুত্রসহ ৪ স্বজনকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ফলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন রোগীরা। কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা।
এদিকে, আজ বেলা ১২ পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান তারা।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সেখানে আজ বেলা ১২ টার মধ্যে দৃশ্যমান উন্নতি হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম ভূঁইয়া। যদি আমাদের চোখে তা পরিলক্ষিত হয় তবে আমরা আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেবো।
গত রোববার ওসমানী হাসপাতালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাই এলাকার ভর্তি হওয়া এক রোগী সোমবার বিকেলে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে মারা যান। এ সময় রোগীর স্বজনেরা চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলেন। তারা ওয়ার্ডের গ্লাস, চেয়ার, টেবিল, দরজা ও ইসিজি মেশিনসহ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং চারজনকে আটক করে।
এদিকে ডাক্তার ও নার্সদের হেনস্তা, হামলা-ভাঙচুরের প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসক ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা ‘কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা চাই’ উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। সোমবার রাতে পরিষদের সভাপতি মো. রাকিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার এ ঘোষণা দেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা কর্মবিরতি শুরু করেন।
সমস্যার সমাধানে আন্দোলনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সাথে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দফায় দফায় বৈঠক হয়। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে মেডিকেল কলেজের সম্মেলনকক্ষে বৈঠকে বসেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম ভূঁইয়াসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিকেল ৪টা পর্যন্ত বৈঠক চলে।
অপরদিকে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের ঘটনায় হাসপাতালের পক্ষে ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব বাদী হয়ে এসএমপির কতোয়ালি থানায় মৃতের স্বজনদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোগলাবাজার থানার কুচাই নোয়াগাঁওয়ের শাহাব উদ্দিনে ছেলে জুবেল আহমদ (২৭), তার সহোদর জুয়েল আহমদ (২৩) ও সাবেল আহমদ (২১) এবং তাদের চাচা একই গ্রামের বাতির আলীর ছেলে আব্দুল মালেক (৫৪) কে আসামী করা হয়। এর আগে ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করেছিলো পুলিশ।
কতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার গ্রেফতার চার আসামিকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
এদিকে, অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলাকালে চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি জানান, সোমবার রাত থেকে কোন ডাক্তার পাননি। নার্সরা ইচ্ছেমতো দায়িত্ব পালন করছেন। ডাকলেও তারা শুনে না। অন্যদিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, কর্মবিরতি চলাকালে সেবাদানে খুব একটা ব্যাঘাত ঘটছে না। মিড লেভেল চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাদের নিরাপত্তাসহ নানা দাবি তুলে ধরেছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে কাজে ফেরানোর ব্যবস্থা করছি। আশ্বস্ত করেছি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি পদক্ষেপ নেবে।