অপরিকল্পিত নগরায়ন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ৪:২৩:১৫ অপরাহ্ন
কৃতজ্ঞ কুকুর অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে শ্রেয়। -শেখ সাদি
অপরিকল্পিত নগরায়নে বাড়ছে নানান সমস্যা। পরিবেশ বিপর্যয়সহ নগরবাসির সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সার্বিক জননিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরীগুলেতে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞগণ। সম্প্রতি দেশে সংঘটিত ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পের পরে এই বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের বেশিরভাগ শহর নগরই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেছে। উচ্চ জনঘনত্ব এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে দুর্যোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, সিলেট ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাছাড়া, কোন শহর যদি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে, তাহলে সেই শহরের ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত সবচেয়ে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশে প্রতিনিয়ত নগরের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এবং সেইসাথে নগরের সুযোগ সুবিধার উপর প্রচ- চাপ বাড়ছে। দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে নগরের সমস্যাগুলো। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ একটি অঞ্চল। বিশেষ করে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শহরের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য অনেকটাই বেড়ে যায়। বিশ্বের অনেক দেশে নগরে বাস করে, জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশে নগরবাসি মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশের মতো। ৬৭ শতাংশ মানুষ এখনো গ্রামে বাস করছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই নগরবাসি হবে। দেশে অর্থনৈতিকসহ সার্বিক উন্নয়নের চাকা এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা কতোটা টেকসই তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে।বিশেষ করে, শহরকেন্দ্রিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনামাফিক না হলে এই উন্নয়ন এক সময় প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়াতে পারে। দেখা গেছে, কোন অবকাঠামো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হলে প্রাথমিক পর্যায়ে এসব ভবন হয়তো তেমন একটা সমস্যার সৃষ্টি করছে না। কিন্তু কিছু দিন পরই এসব ভবন জনগণের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরিবেশ, যোগাযোগসহ নানান সমস্যা সৃষ্টি করছে এইসব ভবন। আর ভূমিকম্পে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি তো আছেই।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ এখন কার্যকর মধ্যবিত্ত দেশের তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পথে। আমরা চাই এই উন্নয়ন যেন কোনভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। অর্থাৎ উন্নয়ন যেন টেকসই হয়। আর টেকসই উন্নয়ন অর্জন করতে হলে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরায়ণের দিকেই ঝুঁকতে হবে। এক্ষেত্রে ১৯৫২ সালে প্রবর্তিত বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট, দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রচলিত ভবন নির্মাণ বিধিমালা এবং সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।