শিমুর প্রতিজ্ঞা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ৪:২৬:৩০ অপরাহ্ন
নুশরাত রুমু
গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিমু। সে দ্রুত হাঁটছে, তবুও পথ যেন শেষই হচ্ছে না। হাত ঘুরিয়ে ঘড়িতে সময় দেখল। দশটা প্রায় বেজে গেছে। অবশেষে স্কুলে পৌঁছে তাড়াতাড়ি ক্লাসে ঢুকল। ছাত্রছাত্রীতে ক্লাস ভর্তি হয়ে গেছে। আগামী মাসে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা। তাই বাহার স্যার আলাদা করে ক্লাস নিচ্ছেন। শিমুর একটু ভয় ভয় লাগছে। গতকাল সে স্কুলে আসেনি। বাড়িতে মেজ খালা এসেছে। খালাত ভাইবোনের সাথে খেলাধূলা করে সময় কাটিয়েছে। তাই আজকের পড়া কী, জানে না। সে রৌশনের পাশে বসেছে। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বাহার স্যার ক্লাসে এসে ঢুকলেন। শিমুকে দেখে জানতে চাইলেন কেন সে কাল আসেনি। শিমু চেহারা করুণ করে বলল, স্যার, কাল আমার খুব জ্বর ছিল, তাই আসতে পারিনি। উত্তর শুনে স্যার সন্তুষ্ট হলেন না। বরং গভীরভাবে তাকিয়ে জ্বরের সত্যতা যাচাই করলেন। গম্ভীর স্বরে বললেন, পরীক্ষা পর্যন্ত ক্লাস মিস দিয়ো না।
তারপর সবার উদ্দেশ্যে বললেন, বিজ্ঞানের শূন্যস্থানগুলো লিখে দেখাও সবাই। শিমুর হাত কাঁপছে। বিজ্ঞানের পড়া পরশুও তেমন শেখেনি। তাই উত্তরগুলো অজানা। সে অনুমান করে কয়েকটা লিখল। রৌশনকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল শেষটা কী হবে?
রৌশন চাপা স্বরে বলল পৃথিবী আর সূর্য। শিমু প্রশ্নটা ভালো করে না পড়েই লিখে ফেলল। কোনটা আগে কোনটা পরে খেয়াল করেনি। খুশি মনে স্যারের কাছে খাতা জমা দিল। সবার খাতা জমা দেয়া শেষ। স্যার হাত থেকে বড় বেতটা দড়াম করে রেখে খাতা দেখা শুরু করলেন। সবাই নীরব। স্যার একমনে খাতা দেখছেন।
শিমুর খাতাটা নিয়ে স্যার বললেন, ইন্না-লিল্লাহ, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে! এটা কী লিখলি? আমার তো পড়েই ভয় লাগছে। শিমুর গলা শুকিয়ে গেল।
বলল, স্যার, আমি নিজে লিখিনি। রৌশন বলল তাই ওটা লিখলাম।
একজন বলল আর তুই লিখে ফেললি! একটু তো মাথা খাটাতে পারতি। নকলটাও ঠিকমত করা শিখলি না। বিপদের সময় সাহায্য করা রৌশন মনে মনে কষ্ট পেল। এভাবে স্যারের কাছে তাকে ধরিয়ে দিল। ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে বলল, স্যার আমি আগে পৃথিবী বলেছিলাম। পড়া বলে দেবার অপরাধে স্যার রৌশনকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। শিমুকে ডাকলেন টেবিলের কাছে। বেতটা হাতে নিলেন। বেতের বাড়িতে শিমুর দু’হাত লাল হয়ে গেল। স্কুলে না আসা, পড়া না পারা, নকল করে আবার ভুল লেখা, এতগুলো অপরাধের শাস্তি বেশিই হবার কথা। শিমু মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে আর অবহেলা করে আর স্কুলে অনুপস্থিত থাকবে না, কারো কাছ থেকে শুনে কোনো পড়া সে লিখবে না।