জগন্নাথপুরে সেতু ভেঙে যাওয়ার পর রাতেই সওজের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড!

# সওজের ৩ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলায় ক্ষোভ

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : জগন্নাথপুর উপজেলার কাটাগাঙ্গের বেইলি সেতুটি ভেঙে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকে থাকা চালক ও হেলপার নিহতের ঘটনার পর তড়িঘড়ি করে সওজের সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানোর ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের জগন্নাথপুর বাজারে আসার পথে সিমেন্টবোঝাই ওই ট্রাকটি সেতুতে উঠলে সেতু ভেঙে নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় ট্রাকের চালক ও তার সহকারী নিহত হন।

সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি-ঢাকা-আঞ্চলিক মহাসড়কে থাকা সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ সদর ও জগন্নাথপুরসহ আশপাশ এলাকার। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা
জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর ওইদিন রাতে জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় গাড়ির মালিক ও নিহত চালক (অজ্ঞাতনামা) এ দুইজনকে আসামী করে (গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ট ২৪-৪৩৭১) তিনকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির মামলা করেছেন সুনামগঞ্জের সড়ক শাখার পাগলা-ছাতক সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান।

এদিকে, ঘটনার রাতেই ১০ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি সাইনবোর্ড সড়কের পাশে সাঁটানো হয়েছে ।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সওজের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন লোকজন। তাছাড়া স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা ঘটনার জন্য সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেছেন। তবে, সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ বলছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে সেতু পার হাওয়াতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের জগন্নাথপুর বাজারের ফাতেমা ট্রেডার্সের মালিক শাকিল আহমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৫০০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে জগন্নাথপুরে আসার সময় জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ- আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের ইছগাঁও এলাকায় কাটাগাঙ্গের স্টিলের বেইলি সেতুতে উঠতেই সেতু ভেঙে ট্রাকটি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় চালকসহ ট্রাকে থাকা দুইজনই ডুবে যান। দুই ঘণ্টাব্যাপী উদ্ধার অভিযানের পর সন্ধ্যায় ট্রাক চালক ভোলাগঞ্জের ফারুক মিয়া (৪০) ও হেলপার সিলেটের ধোপাগুল এলাকার বাসিন্দা জাকির মিয়ার (৩৫) লাশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ ও ডুবুরিরা উদ্ধার করেন।
উপজেলা পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সভাপতি নিজামুল করিম জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে রানীগঞ্জ সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এ মহাসড়কে সবধরনের যানবাহনের চাপ বাড়ে। ঝুঁকিপ‚র্ণ কাটাগাঙ্গের পাটাতন একাধিকবার খুলে পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়ে আসছিল। আমরা নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা সেতুতে দুর্ঘটনার শঙ্কা আগেই ছিল। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে ট্রাকটি বেইলি সেতুতে উঠার সময় ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে। ওখানে ১০ টনের বেশি ওঠতে বারণ করে লিখা সাইনবোর্ড আছে। এ ঘটনায় জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা করেছি আমরা।
নতুন সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি অনেক আগেই লাগানো ছিল। এক পাশের সাইনবোর্ড নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কয়েক দিন আগে এটি লাগানো হয়।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, পরিবহন আইনে জগন্নাথপুর থানায় একটি মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ তাদের পরিবারের লোকজনের নিকট রাতেই হস্তান্তর করা হয়েছে।