পানিসংকট অত্যাসব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ২:০৬:৪১ অপরাহ্ন
প্রৌঢ়ত্ব এবং দুঃখ যতো তাড়াতাড়ি আমাদের রক্ত শুকিয়ে ফেলে অধৈর্যতা তার চেয়েও কম সময় নিয়ে থাকে। -সিলোন
বিশুদ্ধ পানি সংকটের ঝুঁকিতে কোটি কোটি মানুষ। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে পানির সংকট। বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ি, বাংলাদেশে বিশুদ্ধ পানির যেসব উৎস রয়েছে সেগুলো আস্তে আস্তে দূষিত হয়ে পড়ছে। দেশের ৯৮ ভাগ মানুষের আওতার মধ্যে পানির উৎস থাকলেও এর সবটাই পানযোগ্য নয়।
শুধু আমাদের দেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই সুপেয় পানির সংকট দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট আগামি কয়েক দশকে আরও ঘনীভূত হবে। এর কারণ হচ্ছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব। ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ পানিসংকটে পড়তে পারে।অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে প্রতিবছর বিশ্বে পানির ব্যবহার এক শতাংশ বাড়বে। সেইসঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উৎস খাল ও বিল ক্রমাগত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বেড়ে যাবে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা। বিশ্বের ৯৯ শতাংশ সুপেয় পানির চাহিদা মেটাচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু এই পানি অবিবেচকের মতো উত্তোলন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আশঙ্কাজনক হারে ভৃগর্ভস্ত পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পৃথিবীব্যাপি জেঁকে বসা এই সমস্যা বাংলাদেশেও মারাত্মক আকার ধারণ করছে। ইতোমধ্যে তার লক্ষণও দেখা গেছে। যা আগামিতে চরম দুর্দিনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাছাড়া, এ দেশে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর সুপেয় পানির উৎস রয়েছে। তবে এসব উৎস ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে। এমন কি ভূপৃষ্ঠের পানি দূষিত হওয়ার সাথে সাথে ভূগর্ভস্থ পানির উৎসও দূষিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে রয়েছে আর্সেনিক। দেশের বেশিরভাগ এলাকায় নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক দূষণ। জানা গেছে, আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দেশে এখন প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জনের মৃত্যুর কারণ। এই আর্সেনিক বিষক্রিয়া ভবিষ্যতে প্রায় ৩ লাখ মানুষের দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হতে পারে বলে আশংকা রয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, কৃষিকাজ, দৈনন্দিন গৃহস্থালির কাজ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সবচেয়ে সস্তা মাধ্যম হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি। অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হলে পরিণতি স্বরূপ জমি শুকিয়ে পানির সরবরাহ কমে যেতে পারে।তাই সময় থাকতে ভূগর্ভস্থ পানির অপরিকল্পিত উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দূষণমুক্ত রাখতে হবে ভূপৃষ্ঠের পানি। তাছাড়া, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের যে লক্ষ্যগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে সব মানুষের জন্য সুপেয় বা বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে হবে। সেদিকেই এগোতে হবে আমাদের।