বৃষ্টি ও বন্যা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ৫:৪০:৩৬ অপরাহ্ন
![বৃষ্টি ও বন্যা বৃষ্টি ও বন্যা](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2023/08/dak-po-sompadoki-300x191-1-150x150-1.jpg)
লুৎফুর চৌধুরী
আমাদের দেশের পল্লী ও হাওরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে ভিন্ন এক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। শাপলা, শালুক, কলমিলতাসহ নানা রকম শাকসবজি ও লতাপাতায় ভরে যায় হাওর। যখনই বর্ষা চলে যায়, দূর থেকে দেখা যায় মাটিতে ফাটল ধরেছে। মাঠঘাট খালবিল হাওর ডুবা শুকিয়ে কাঠ হয়েছে। ধূসর হয়ে ধূলোতে সবুজ সৌন্দর্য মরে গেছে। তখন শুধু বৃষ্টি হলেই কৃষকের তৃষ্ণা মেটে। পল্লী বাংলার প্রকৃতির দ্বার খুলে যায় আবার। বৃষ্টির ফলে বর্ষাকালে পরিবর্তন আসে পল্লী প্রকৃতিতে। আজকের দিনে গ্রীষ্মকাল এলে যেভাবে মাঠঘাট খালবিল হাওর ডুবা একেবারে শুকিয়ে যায়, সেটা আগে ছিল না। গ্রীষ্মকালে পানি একেবারে কমে যাওয়ার কারণ হলো সেগুলোর অবস্থা বেহাল, গভীরতা কমে গেছে। বর্ষা হলে নদীর কূল ডুবে যায়, বাঁধ নির্মাণেন কারণে উপরের পানি নিচে যেতে পারে না। উঁচু জায়গায় অল্প বৃষ্টি হলে চারপাশ ডুবে যায়।
বন্যা হলো হাওর নদী খালবিলের প্রাণ। গ্রীষ্মকালে যা দেখে মনে মরে গেছে। বর্ষাকালে দেখা যায় তাদের প্রাণ ফিরে এসেছে। কোন কোন অঞ্চলে অবিরাম বৃষ্টিতে পানির ঢেউ খেলে। আবার সবমিলিয়ে ধূলিবালি পরিস্কার করে। তখন চোখ দুটো ভরে দেখি আমার সবুজ বাংলা। মনে সবুজ সাগর। আকাশ কালো করে যখন বৃষ্টি নেমে আসে, তখনই চমকে ওঠে গাছগাছালির সবুজ পাতা। ফিরে এসে মাটির রস সবুজ ঘাসের সজীবতা। গরুছাগল ভেড়া খেতে পায় সবুজ ঘাস।
গ্রীষ্মকালে সূর্য্যরে তাপ আগুনের মত ছড়িয়ে খেতখামার খালবিল শুকিয়ে যায়। রৌদ্রের তীব্রতায় কাঁচা ধানের গাছ ঝলসে যায়। ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। গ্রামবাংলার মানুষের দুঃখ দুর্দশার শেষ থাকে না। একসময় বৃষ্টি বা বন্যা ছিল গ্রামবাংলার মানুষের সুখের পরশ। বর্ষায় জমিতে পলি জমে মাটি উর্বর হত। এতে চাষ ভালো হতো। আজকের দিনে গ্রামবাংলার মানুষের জন্য বর্ষা যেমন আনন্দ দেয়, তেমনি দেয়র দুঃখকষ্টও। বাইশের বন্যার ক্ষত এখনো রয়ে গেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার গোতগাঁও গ্রামের উত্তর পাশে ছিল খাঞ্জা নদী সংযুক্ত ডাকিয়া খাল। কিন্তু নদী বিলুপ্ত, ডাকিয়া খাল পাশাপাশি একটি জঙ্গল, তা বিলুপ্তির পথে। বিবিয়ানা নদী তো একটি খাল বটে। বর্ষার মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর পানি ঢেউ খেলে দু’কূল ডুবিয়ে দরিদ্র মানুষের সবকিছু ভাসিয়ে যায়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে দাঁড়ালে মন কেঁপে ওঠে। বোঝা যায় না এটা নদী না খাল এবং নদীর চর ফেটে যায় রোদের তাপে। নদী ও খাল-বিলের গতিপ্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে হবে। তাহলেই বাঁচবে কৃষক, বাঁচবে সবুজ বাংলার সবুজ প্রকৃতি।
লেখক : কবি।