কৃষিপণ্যের মুনাফা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ৫:৫৩:৫৮ অপরাহ্ন
অযোগ্য লোককে দায়িত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া চরম দায়িত্বহীনতা। – শেখ সাদি।
কৃষিপণ্য বিক্রিতে মুনাফা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। উৎপাদন থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কৃষিপণ্য বিক্রিতে এই মুনাফার হার নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষে কৃষি বিপণন বিধিমালা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে সর্বনিম্ন মূল্য থেকে শুরু করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ কেনাবেচা করতে হবে। দেড় বছর আগে এই বিধিমালা জারি করা হলেও এর কো ন কার্যকারিতা চোখে পড়ছে না।
বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামের কোন ঠিকঠিকানা নেই। কোন পণ্যের দাম কখন বাড়ে, তা কেউ জানে না। প্রায় সময়ই কারণে অকারণে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়িরা নিজেদের ইচ্ছেমতো পাইকারি বা খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করছে। বাজারে এখন নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এই অবস্থায় প্রণীত হয়েছে কৃষি বিপণন বিধিমালা। এর আওতায় কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ মুনাফার হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ি ধান, চাল, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ যৌক্তিক মুনাফা করা যাবে ৩০ শতাংশ। পাইকারি পর্যায়ে ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ মুনাফা করা যাবে। তাছাড়া, শাকসবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন অর্থকরি ফসলের মুনাফাও প্রায় একই হারে নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বা সরকার নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদ- বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত হওয়ার বিধান আছে উল্লিখিত কৃষি বিপণন বিধিমালায়। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়েছে- বাজার থেকে কৃষিপণ্যের পাইকারি দাম সংগ্রহ করে সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ খরচ, দোকান ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি সব বিবেচনা করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়। প্রথমত কৃষিপণ্যের সরকার নির্ধারিত মুনাফার হার কতোটুকু গ্রহণযোগ্য, বিশেষ করে ভোক্তাদের কাছে- সেটা দেখতে হবে। অনেকেই বলেছেন, সরকার যে মুনাফার হার নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা এমনিতেই অতিরিক্ত, তার ওপর বিক্রেতারাও পণ্যের দাম নির্ধারণ করে লাগাম ছাড়া। সব মিলিয়ে পণ্যের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, যা ক্রেতাদের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যায়।
সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, কৃষিপণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছা পর্যন্ত কৃষকেরই শ্রম ও সময় ব্যয় হয় বেশি। অথচ এসব পণ্যের মুনাফায় ভাগ সবচেয়ে কম থাকে সে কৃষকেরই। প্রচলিত উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থায় মুনাফার বেশিরভাগই পকেটস্থ হচ্ছে ফড়িয়া থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ি পর্যন্ত মধ্যস্বত্বভোগিদের। অনেক সময় ৮০ শতাংশের বেশি মুনাফা চলে যায় ফড়িয়া, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়িদের পকেটে। বাজারে সরকার নির্ধারিত হারে পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করার ব্যাপারে মনিটরিং জোরদার করতে হবে।