কর্মবীর এক মহান শিক্ষক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ৬:০০:৩৫ অপরাহ্ন
মো. মুজিবুর রহমান
মানুষ তার কর্মগুণে পৃথিবীতে অমর হয়ে থাকে। তেমনি এক কর্মবীর হলেন আমার আব্বা আলহাজ মো. মবশ্বির আলী। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার অর্ন্তগত লালাবাজার ইউনিয়নের বাঘরখলা গ্রামে ১৯২৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। জন্মের আগেই বাবাকে হারান। মায়ের ভালোবাসায় লালিতপালিত হয়ে শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনী শুরু করেন । তখন কলকাতা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এন্টান্স পরীক্ষা দিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখেন। পরবর্তীতে পিটিআই ট্রেনিং দিয়ে ১৯৪৬ সাল থেকে প্রাইমারি শিক্ষকতা শুরু করেন। চাকরী জীবনের প্রথমে কর্মস্থল ছিল বালাগঞ্জ থানার উমরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, যা নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে। ৫ বছর পর বদলী হয়ে সিলেট নগরীর খাসদবীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৫ বছর শিক্ষকতা করেন। তখনকার সময়ে লেখাপড়ার প্রতি মানুষের অনাগ্রহের কারণে সিলেট অঞ্চলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল অনেক কম। তাই নিজ থানা সদরে (দক্ষিণ সুরমা) পর্যাপ্ত স্কুল ছিল না। আলহাজ মবশ্বির আলি তাঁর চাকরি জীবনের শেষ দিকে ১৯৭০ সলের পর জাফরাবাদ
প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৫ বছর এবং পরবর্তীতে নিজ গ্রাম দশহাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি জীবন শেষ হওয়া পর্যন্ত (১৯৮৬ সাল) শিক্ষকতা চালিয়ে যান। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লালাবাজার ক্লাষ্টার (শিক্ষক সমিতি) থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। পারিবারিক জীবনে তিনি ৭ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। সন্তানরা হচ্ছেন, আব্দুল মতিন, মাওলানা মনির উদ্দিন, মঈজ উদ্দিন, বশির উদ্দিন, মুহিবুর রহমান, আব্দুল মুকিত, মো. মুজিবুর রহমান, ফাতেমা খানম, রহিমা খানম ও নুরজাহান খানম।
ছেলে, নাতি-নাতনিসহ তাঁর রেখে যাওয়া উত্তরাধিকারীরা শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাঁর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে মো. মুজিবুর রহমান জৈন্তাপুর তৈয়ব আলি কারিগরি কলেজে শিক্ষকতা করছেন। নতুন প্রজন্মদের মধ্যে ১২জন মাস্টার্স ডিগ্রিধারী ও ১জন ডাক্তার, ৩ জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন।
ক্ষণজন্মা এই পুরুষ নিজ গুণে যেমন ছিলেন কর্মনিষ্ঠ, তেমনি সমাজসেবক ও একজন খোদাভীরু হিসাবে সকল মহলে ছিলেন সমাদৃত। ১৯৯০ সালে মহান করুণাময়ের ইচ্ছায় তিনি মক্কা-মদিনা জিয়ারত করেন। তারপর জীবনের শেষ দিনগুলো নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। ১৯৯৬ সালের ২১ জানুয়ারি ৫ রমজান না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। মহান রাব্বুল আলামিন এই কর্মবীর দেশপ্রেমিককে জীবনের ত্রুটি বিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান করুন। আমিন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, জৈন্তাপুর তৈয়ব আলী কারিগরি কলেজ, সিলেট।