অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন
দোয়ারাবাজারে নদীভাঙনের মুখে পাঁচগ্রাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ২:৫১:১০ অপরাহ্ন
![<span style='color:#000;font-size:18px;'>অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন</span><br/> দোয়ারাবাজারে নদীভাঙনের মুখে পাঁচগ্রাম <span style='color:#000;font-size:18px;'>অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন</span><br/> দোয়ারাবাজারে নদীভাঙনের মুখে পাঁচগ্রাম](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2023/08/P-1-26.jpg)
তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ইজারাবহির্ভ্তূ চেলা নদীর পাড় কেটে যত্রতত্র অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন পাঁচ গ্রামবাসী। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি, বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলো হচ্ছে- পূর্বচাইরগাঁও, সারপিনপাড়া, সোনাপুর, রহিমেরপাড়া ও দৌলতপুর। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে একটি অসাধু চক্র অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করায় অল্প বৃষ্টিতেই ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতঘর ও ফসলি জমি। ইতোমধ্যে বসতঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন নদীতীরের অনেকেই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, চরম ঝুঁকিতে রয়েছে চেলা নদীর উত্তরপাড়ে সারপিনপাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া, সানুর আলী, মইনুল ইসলামসহ অনেকের বসতঘর। এ সময় মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হলো আজাদ মিয়ার একটি ঘর। মালামাল রক্ষায় আরেক ঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তিনি জানান, ভাঙনের কবল থেকে জানমাল রক্ষার্থে গত দুদিনে বসতঘরসহ নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন অনেকেই।
দেখা গেছে, মেঘালয় থেকে নেমে আসা খরস্রোতা চেলানদীর যত্রতত্র অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে পূর্বচাইরগাঁও- সোনাপুর অংশে নদীতে বাঁক ধরেছে। সেখানে প্রবল ¯্রােতের ঘূর্ণিপাকে বিগত বছরগুলোতে ওই পাঁচ গ্রামের ব্যবহৃত কাঁচা সড়কটির প্রায় ৫শ’ গজ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পরবর্তীতে পূর্বচাইরগাঁও-রহিমেরপাড়া গ্রামে জমির ওপর দিয়ে বিকল্প সরু রাস্তায় কোনোমতে চলাচলসহ কৃষিপণ্য বাজারজাত করছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিতভাবে নদীর পাড় কেটে ইজারাবহির্ভূত জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে এ যাবৎ ভাঙনে বিলীন হয়েছে পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ২০টি বসতঘর, একটি স্কুল ও স্থানীয় কাস্টমস অফিস এবং সোনাপুর, দৌলতপুর, রহিমের পাড়া, সারপিনপাড়া গ্রামের অন্তত ৫০টি বসতঘরসহ একাধিক গ্রামীণ সড়ক। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের শাহজাহান মিয়া জানান, ‘তার প্রায় ২ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গত বছর তার শেষ সম্বল বসতবাড়িটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে গ্রামের অন্যের ভিটায় মাচা বেঁধে পরিবার নিয়ে কোনোমতে মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছেন।’
সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া বলেন, ‘চেলা নদী শুধু বাড়িঘরই নয়, আমাদেরও গিলে খাচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচবার বসতবাড়ি স্থানান্তর করেছি। জমিজমা সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। সরকারের মন্ত্রী, এমপি, চেয়ারম্যান, কেউই আমাদের খোঁজ নেয়নি। শুধু নির্বাচন এলেই তাদের দেখা মিলে।’
রহিমেরপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫২ বছরেও চেলা নদীর উভয়তীরের মানুষের জীবনমানের কথা কেউই চিন্তা করেনি। চেলা নদী থেকে অবৈধভাবে লুটেপুটে খাচ্ছে অসীম ক্ষমতাধর বালুখেকো মহল। যার ফলে নদীগর্ভে ক্রমশ বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এখন ওই পাঁচটি গ্রাম রক্ষায় চেলা নদীর বালু মহাল বন্ধ করে নির্ধারিত স্থানে বাঁধ দেওয়া হোক। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধসহ গ্রামীণ সড়কটি নির্মাণের দাবি জানান তিনি।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আম্বিয়া আহমদ বলেন, ‘নদীভাঙন কবলিত ছোট-বড় সড়কগুলো মেরামতে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা অবহিত করলে টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ণ করে বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বাবু বলেন, ‘শুধু চেলা নদীর পাড়ই নয়, উপজেলার সুরমা, চেলা, খাসিয়ামারা নদীতীরের মানুষ নদীভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশ নিঃস্ব হচ্ছেন। বড় কোনো প্রকল্প না পাওয়ায় কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-২) শামসুদ্দোহা বলেন, ‘চেলা নদীটি পাহাড়িয়া নদী হওয়ায় পানির তীব্র ¯্রােতের কারণে আশপাশের গ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চেলা নদী ভাঙনে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বড় ধরনের প্রকল্প প্রয়োজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি ডিও লেটার দেন, তাহলে বড় প্রকল্প সম্ভব।