সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ৫:১৬:১০ অপরাহ্ন
নিজের চিন্তা, মতামত এবং কাজকর্মকে সর্বাপেক্ষা উত্তম মনে করা এবং অন্যের সবকিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করার নামই আত্মপ্রশস্তি এবং ইহা একটি মারাত্মক চারিত্রিক দোষ। -ইমাম গাজ্জালি
প্রাথমিক শিক্ষায় পিছিয়ে সিলেট। সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এক জরিপের মাধ্যমে এই তথ্য দিয়েছে। এতে বলা হয়, দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় এগিয়ে রয়েছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগ। পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। তবে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ‘জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করা হয় ২০২২ সালে।
একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠনে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে মানুষের শিক্ষাজীবনের মূল ভিত্তি। তাই সরকারও প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সবার জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে বই প্রদান প্রভৃতি চালু করেছে সরকার মূলত প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতির জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, উল্লিখিত কর্মসূচিগুলো চালুর তিন দশক পরেও প্রাথমিক বিদ্যালয় বয়সি শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়মুখি করা যায় নি। তারই প্রতিফলন ঘটেছে এই জরিপে। জানা গেছে, সাধারণত দুই বছর পর পর জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন জরিপ চালানো হয়। ২০১৭ সালের পর করোনার কারণে জরিপ স্থগিত ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে আবারও জরিপ চালানো হয়। জরিপে পাওয়া যায় প্রাথমিক শিক্ষায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় এগিয়ে রয়েছে এবং সেই তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। আর সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে রয়েছে সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ করা যেতে পারে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ১৯৭২ সালে সরকার ৩৬ হাজার ৬৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করে। ১৯৯২ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ গঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে এই বিভাগকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিণত করা হয়। ২০১৩ সালে দেশের আরও ২৬ হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সরকারিকরণ করা হয়। কিন্তু এতোকিছুর পরেও প্রাথমিক শিক্ষার দৈন্যদশা কাটছেনা। এর নানামুখি কারণ রয়েছে। যেমন-শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা কম, শিশুদের পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোর অভাব, শিক্ষকদের সঠিক প্রশিক্ষণ ও ক্লাসে তা বাস্তবায়নে অনীহা, শিক্ষায় আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করতে না পারা, বিদ্যালয়ে পাঠাগার ও হাতে-কলমে শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, অভিভাবকদের আন্তরিকতার অভাব প্রভৃতি।
প্রাথমিক শিক্ষায় সিলেটের শিশুরা পিছিয়ে পড়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলেই আমরা আশাবাদি। সিলেট বিভাগের চার জেলার পাঁচ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের খালি পদগুলো অচিরেই পূরণ করা দরকার। পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে সুপারভিশন কার্যক্রম বৃদ্ধি, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম আনন্দদায়ক করা, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম জোরদার করারও উদ্যোগ নিতে হবে।