নির্বাচন ও গণতন্ত্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ৫:২০:৪৮ অপরাহ্ন
মো. আব্দুল ওদুদ
জনগণ রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক। সেই ক্ষমতার পরম অভিব্যক্তি প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন। সংবিধান মোতাবেক সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সরকার গঠন করে। বাংলাদেশে কোনো দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে, কোনো নির্বাচনই বিতর্কের বাইরে নয়। ১৯৭৫ ইংরেজির ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের পর (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বাদে) মার্শাল ল’র অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে তা ছিল জনগণের সঙ্গে এক ধরনের ছলচাতুরী। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি উনার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। আওয়ামী লীগ বিরোধী দল হিসাবে সংসদে আসন গ্রহণ করে। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সব সংসদ সদস্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একযোগে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিলে সব রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচন বর্জন করে। তবে ১৫ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তার আয়ু ছিল মাত্র ১১ কার্য দিবস। ওই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন পাশ হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি সহ চার দলীয় জোট জয়লাভ করে এবং সরকার গঠন করে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জঙ্গি গ্রুপ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রাণনাশের লক্ষ্যে গ্রেনেড হামলা চালায় তাতে ২৩ জন নিহত ও শত শত নেতা কর্মী আহত হন। ২০০৬ সালে আন্দোলন সংগ্রাম আওয়ামী লীগ শুরু করে। লগি-বৈঠা নিয়ে আওয়ামী লীগ মিছিল করে। জামাত বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়। অরাজক পরিস্থিতির কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।
২০০৭ সালে ১২ জানুয়ারি ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। এ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এ নির্বাচন ছিল সবার কাছে অগ্রহণযোগ্য। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে নিশি রাতের ভোটের নির্বাচন বলে অনেকেই মন্তব্য করে থাকেন। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী হিসাবে আমিও হতাশ, ব্যথিত এবং লজ্জিত।
গত ২১শে জুন ২৩ইং রাতে রাজধানী ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশন বৃটেনের নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের অফিসিয়াল জন্ম দিন এবং তিনি ও তার স্ত্রী রাণী ক্যাসিলার রাজ্যাভিষেক উদযাপনের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কুটনীতিক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, নানা শ্রেণি পেশার প্রতিনিধি থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানে যোগ দেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান এম.পি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, নাহিম রাজ্জাক এমপি সহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর সহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের পাশেই বসেন আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ নেতা ফারুক খান এমপি। এক পর্যায়ে মির্জা আব্বাস এবং ফারুক খান একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে সৌজন্যমূলক আলাপ আলোচনা করেন। এই আলাপ আলোচনা অবশ্যই রাজনৈতিক ভদ্রতা। উক্ত অনুষ্ঠানে বৃটিশ হাই কমিশনার সারাহ কুক তার বক্তব্যে বলেছিলেন, আজকের এই জন্মদিন উদযাপন বৃটেনের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার আহ্বান জানান বৃটিশ দূত। শুধু বৃটিশ দূতই নন, ঢাকায় নিযুক্ত অধিকাংশ রাষ্ট্রদূত এবং কুটনীতিকরাই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, হস্তক্ষেপ মুক্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছেন। আর সে জন্য তারা সরকারি দল এবং বিরোধীদলগুলোর মাঝে সংলাপের তাগিদও দিয়ে যাচ্ছেন।
সদ্য বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াও ঢাকা ত্যাগের আগে বলেছেন, আমি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অর্ন্তভুক্তিমূলক শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে সব পক্ষকে আহ্বান জানাই। তিনি এটাও বলেছেন, আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।
বাংলাদেশের রাজনীতিকরা নিজেদের সমস্যা নিজেরা মিলে ঠিক করতে পারলে কারোই তো অখুশি হওয়ার কথা নয়। নিজেদের সমস্যা নিজেরা ঠিক করতে চাইলে যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা বা সংলাপ এর প্রয়োজন সেটা বাস্তবতা। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতারা মাঝে মাঝে দুই পক্ষের মাঝে সংলাপের বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দিলেও প্রায় তারা সংলাপের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে তাকে স্বাগত জানান। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে সংলাপে সব সময়ই রাজি বিএনপি এমনটি অনেকবার জানালেও ইস্যুবিহীন কোনো সংলাপে যেতে রাজি নয় দলটি। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে বলেও দলটির দাবি। অন্যদিকে সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা না করার বিষয়ে অনড় আওয়ামী লীগ। এ কারণেই থমকে আছে সংলাপ।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারি দল তথা সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো সহ সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সংলাপ আয়োজন এবং সংলাপে বিরোধী পক্ষকে রাজি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দায় তো সরকারের উপরই বর্তায়।
সদ্য ১৭ই জুলাই অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন। এ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ এ আরাফাত। এছাড়া আশরাফুল আলম সাঈদ উরফে হিরো আলম সহ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন হিরো আলম।
হিরো আলম সাধারণ ও নি¤œবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। হিরো আলম তার নিজের যোগ্যতা মেধা দিয়ে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারণে বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসেন। তিনি একাধারে চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, গানের জগৎ ও মডেলিংয়ে কাজ করেছেন, বই লিখিয়েছেন, ব্যবসা করেছেন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও আত্মনিয়োগ করেছেন।
২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দুটি আসনেরই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উপ-নির্বাচনে হিরো আলম উভয় আসনে পরাজিত হলেও বগুড়া-৪ আসনের বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের ব্যবধান ছিল ৮৩৪।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে সকাল থেকেই প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি অত্যন্ত কম ছিল। কোনো কোনো কেন্দ্রে ১ ঘন্টায় ১টি ভোটও পড়েনি। তবে ভোট কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের জটলা ছিল। ভোটে জয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ভোট পড়ার হার ১১.৫১ শতাংশ। আন্দাজ করা যায় এত ভোটও পড়েনি। ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা মানুষকে ভোট বিমুখ করে তুলেছে। ভোটাররা জানে তারা ভোট কেন্দ্রে না গেলেও তাদের ভোট কেউ না কেউ দিয়ে দেবে। ভোটের প্রতি মানুষের অনীহার একটি বড় কারণ বিএনপি ভোটে অংশগ্রহণ না করা। ফলে নির্বাচনগুলো সত্যিকার অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হচ্ছে না। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জনগণ কতটুকু অধিকার ভোগ করতে পারে তা এখন চিন্তার বিষয়। পাঁচ বছর পর পর ভোট দিতে পারা জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। জনগণ যখন দেখে তাদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে ফেলেছে, তখন তাদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
ঢাকা-১৭ আসনটি গুলশান ও বনানী জুড়ে। ঢাকার সম্পদশালী ধনীরা এ এলাকার বাসিন্দা। তবে এখানেও অনেক মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ বাস করে। বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্রীয় আনুকল্য পেয়ে ধনাঢ্য হয়েছে, তারা কেবল নিজের কথাই ভাবে, দেশের কথা ভাবে না। ধনাঢ্য শ্রেণির মানুষগুলো যদি দেশ কীভাবে চলছে তা নিয়ে ভাবত, উদ্বিগ্ন হতো তাহলে কোন সরকারই এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারত না।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ঘন্টাখানেক আগে বনানীর একটি ভোট কেন্দ্রের বাহিরে হিরো আলমকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেন নৌকা প্রতীকের বেশধারী বেশ কিছু যুবক। মারধরের পর হিরো আলমকে ধাওয়া দিয়ে এলাকা ছাড়া করে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলের আশে পাশে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত থাকলেও তারা ছিলেন দর্শকের ভূমিকায়। হিরো আলম তাকে বাঁচানোর জন্য উপস্থিত আনসারদের এগিয়ে আসতে বলে ছিলেন। কিন্তু অজানা কারণে আনসাররা এ স্বতন্ত্র প্রার্থীর নিরাপত্তা বিধান করতে এগিয়ে আসেনি। এ কথা অনেকটাই জানা ছিল যে, যত কম সংখ্যক ভোট পড়–ক না কেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্তী মোহাম্মদ আলী আরাফাতই জয়ী হবেন। এ অবস্থায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমকে মারধর করা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহ্য করতে চায় না, তারা আর যাই হোক দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তারা কোনো অবস্থাতেই গণতান্ত্রিক নয়।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে শেষ পর্যন্ত আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়াল হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনাটি। এমন সময় এ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে, যখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাকনির্বাচন পর্যবেক্ষকদল ঢাকা সফর করছে। তারা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ এবং নির্বাচন পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য এসেছেন। ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে হিরো আলমের ওপর হামলার আগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী তায়েকুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে অনুষ্ঠিত এ উপনির্বাচনে ভোট হয়েছে কাগজের ব্যালটে। ঢাকা-১৭ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। অধিকাংশ কেন্দ্রেই ভোটারদের কোনো লাইন ছিল না। ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অলস সময় কাটিয়েছেন।
নির্বাচনের দিন রাত ৯ টায় রিটার্নিং অফিসার এ উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত মাত্র ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পরিবেশ প্রত্যক্ষ করার জন্য যে টিম ঢাকায় অবস্থান করছিল তাদের জানা হয়ে গেল বাংলাদেশে ভোটের পরিবেশ কেমন।
বড় দুটি রাজনৈতিক দলেই প্রচুর ভাল মানুষ, নির্লোভ মানুষ, নিঃস্বার্থ মানুষ, শিক্ষিত মানুষ, জনদরদি মানুষ, নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে জনকল্যাণে নিয়োজিত মানুষ থাকা সত্ত্বেও দলীয় হাইকমান্ড এসব মানুষকে মূল্যায়ন করেন না। নির্বাচনে সঠিক প্রার্থী বাছাই করা হয় না। যার ফলে দলের জনপ্রিয়তা টেকসই হয় না। পরের নির্বাচনেই গণেশ উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয় বিধায় নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে জনগণের ওপর আস্থা না রেখে বিকল্প রাস্তায় পা বাড়াতে হয়।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কলামিস্ট।